সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

প্রবীর চট্টোপাধ্যায়। প্রথম পর্ব

অনার্য সংস্কৃতিকেও উদরস্থ করে গড়ে ওঠে এই ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি- আর্যব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি যখন অনার্য সংস্কৃতি অর্থাৎ আর্য সৃষ্ট তথাকথিত শূদ্র সংস্কৃতি আত্মসাত করতে শুরু করল, তখন অনার্যদের নাগ পূজা, প্রকৃতি পূজা, চাণ্ডী পূজা, সবকিছুর মধ্যে ব্রাহ্মণ্য আচার পদ্ধতি মিশিয়ে অনার্য সংস্কৃতিকেও উদরস্থ করতে লাগল। যিনি আর্য দলপতি ও দেবতা সম্মানে মান্য হতেন, সেই ইন্দ্রকে দুই বার যুদ্ধে পরাজিত করেন যে অনার্য বীর,সেই শ্রীকৃষ্ণের হাত থেকে এই আর্যদের গুরু হিসাবে কথিত ঋষি বৃহস্পতির মধ্যস্থতায় প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে যান । সেই কৃষ্ণ'কেও দেবতা হিসেবে গ্রহন করেন আর্যব্রাহ্মণেরা।

মুর্শিদ এ এম

জীবন ডাকে বারবার একজন সুস্থ মানুষ যতদিন এই ধরার বুকে থাকে, ততদিন তার মগজে এই অনিবার্য সত্যের সন্ধান থেকে রেহাই নেই—সে কেন বেঁচে আছে? যুগে যুগে এই প্রশ্নটি যেমন সৎ মানুষকে বিব্রত ও পীড়িত করেছে, তেমনি এর সমাধানেও প্রচুর সময় ব্যয় হয়ে আছে। জীবনের সঙ্গে জন্মের যোগ অঙ্গাঙ্গি এ আর নতুন কথা কী। জন্ম আদতে এক সূক্ষ্ম অথচ জটিল প্রাকৃতিক ক্রিয়া। তবু একে ঘিরে নানা প্রশ্ন, নানা সংস্কার, নানা জল্পনা। বেঁচে থাকা এই জন্মের এক বিস্তৃত অনিবার্য রূপ। যা ক্রমশ আরেক অনিবার্যতার দিকে ধাবিত করে, যাকে আমরা সহজভাবে মৃত্যু নামে বুঝি। এই দুই প্রাকৃতিক ক্রিয়া যাবতীয় দৃশ্যমান কিংবা কিছু অনুভূতিমান বস্তু কিংবা বস্তুগুণের প্রমাণসাপেক্ষে আমরা বুঝে থাকি। অথচ কোনো কোনো মতবাদ ইজম সংস্কার একে জটিলরূপে দেখতে বা নীরিক্ষা করতে চায়। যেমন কেউ কেউ জন্মকে আরেক বিগত জন্মের সাপেক্ষে এই ধরাধামে প্রবেশের ছাড়পত্র হিসেবে প্রতিভাত করতে চায়। তাঁদের মতবাদ মনে করে কিংবা বিশ্বাস করে, বিগত জন্মে সৎ বা অসততার সঙ্গে ইহজন্মের ভালোমন্দ জড়িত। তাহলে এক অতি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর চাওয়া যায়, বিগত জন্মের প্রমাণ কোথায়? সেটির সময়কাল বা তারি...

আমার জাদুবাস্তবতা - মলয় রায়চৌধুরী

আমার জাদুবাস্তবতা - মলয় রায়চৌধুরী শৈশবে ও তারুণ্যে পশ্চিমবঙ্গের যে বাস্তব জগতের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল, যাকে আমি চোখ বুজে আজও মগজের ভেতরে স্পষ্টভাবে উদ্ভাসিত করতে পারি, যে-আইডিলিক বাস্তব জগতে আমি আর বোনভাইরা লন্ঠনের আলোয় বসে বড়োজেঠিমার কল্পকাহিনীগুলোকে, যেগুলো উনি রামায়ণ, মহাভারত, পঞ্চতন্ত্র, আরব্য রজনী,ঠাকুমার ঝুলি, ঈশপের ফেবল ইত্যাদির কাহিনিকে মিলিয়ে-মিশিয়ে নিজের মতন করে আমাদের শোনাতেন, সেই কাহিনিগুলো উত্তরপাড়া কোন্নোগর গরলগাছা পাণিহাটি নিমতা ইত্যাদি তখনকার গ্রামে প্রতিস্থাপিত করতে পারতুম, লিখতে আরম্ভ করে দেখলুম যে সেই বাস্তবকে অপসারিত করে দিয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা ধরণের আপাত-অবাস্তব, বাস্তব ঘটনাবলি, যা ঘটিত ঘটনা, মগজের ভেতরে ছবি তৈরি করে ভাবলে মনে হয় অবিশ্বাস্য, অসম্ভব, শিউরে ওঠার মতন অনেক সময়ে। আমার শৈশব কেটেছে অতিদরিদ্র নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের, সেসময়ে যাদের বলা হতো অন্ত্যজ, ও গরিব শিয়া মুসলমান অধ্যুষিত পাড়া পাটনার ইমলিতলায়, যার বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতায় ছিল অতিবাস্তবতার, অসম্ভাব্যতার, সাংস্কৃতিক অনুমানসমূহের, মিথের, সামাজিক কিংবদন্তির বাস। তাদের নৈতিকতায় বাইনারি অপোজিটস বা যুগ্ম বৈপরীত্যের ...

সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধান

সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধান - আলী হোসেন আবির্ভাবের পর মানুষ প্রায় অন্যান্য প্রাণীদের মতই জীবন-ধারণ করত। বেঁচে থাকার জন্য অন্যদের মত খাদ্য সংগ্রহ ও জীবনের নিরাপত্তা বিধানই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু অন্য প্রাণীদের তুলনায় মানুষের চিন্তন ক্ষমতা উন্নত হওয়ায় তারা তাকে কাজে লাগিয়ে খাদ্য উৎপাদন শুরু করে। খাদ্য উৎপাদনকে কেন্দ্র করেই উৎপত্তি হয় ব্যক্তিগত সম্পত্তির। সম্পত্তির উপর অধিকার কায়েম করতে গিয়ে বেধে যায় গোষ্ঠী-লড়াই। এই লড়াই জন্ম দিয়েছে রাজনীতি তথা রাজনৈতিক ক্ষমতার। ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়লাভ করেছে সেই ব্যক্তি, যার পেশী ও মাথার জোর বেশী। সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধানে এই তথ্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। গোষ্ঠী-মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পেশী ও মগজের জোরওয়ালা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে একগোষ্ঠি ভেঙ্গে নতুন নতুন গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। পরবর্তীকালে শুরু হয়েছে এক গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের লাড়াই। লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের পথ বেয়ে সেই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াই আজ বর্তমান চেহারা নিয়েছে। আসলে মানব সভ্যতার ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই ক্ষমতা দখলের লড়াই যা সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধান...

সুদীপ্ত ভাস্কর দত্ত

কাল্পনিক আলাপচারিতায় বিশ্বকবি ও বিশ্ব বন্দিত সন্ন্যাসী [বাংলার নবজাগরণের দুই দিকপাল – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৬১-১৯৪১) ও স্বামী বিবেকানন্দ(১৮৬৩-১৯০২) সমকালিন সময়ে কলকাতায় জন্মেছিলেন। এঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল বা এঁরা আদৌ পরস্পরের পরিচিত ছিলেন কিনা এই নিয়ে বাঙ্গালি সমাজের কৌতূহল আজও সীমাহীন। সন্ন্যাসজীবনের আগে বিবেকানন্দ (তখন, নরেন্দ্রনাথ দত্ত ) ‘সঙ্গীত কল্পতরু’ নামে যে গ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন তাতে বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত স্থান পেয়েছিল। বস্তুতঃ, তিনি কবির কিছু গান শুধু পছন্দই করতেননা, নিজে গাইতেনও। তরুন বয়সে এঁরা দুজনেই কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত বাড়ির গানের আসরে একই সাথে অংশ গ্রহণ করেছিলেন – এমন ঘটনার কথাও জানা যায়। ঠাকুর পরিবারের এক তরুন সদস্য কলেজে নরেন্দ্রনাথের সহপাঠী ছিলেন এবং নরেন্দ্রনাথ তাঁর সাথে দেখা করতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে প্রায়শই যেতেন। ফলে, খ্যাতনামা

কিন্নর রায়

বাংলা, বাংলা নয়, বাংলা হয় বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের অনেকের আবেগই পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি, কখনও কখনও উনিশে মে তে-ই সীমাবদ্ধ থাকে। এই সব নির্দিষ্ট দিনে আমরা  বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে কথা বলি, গান গাই, হয়তো তর্কও করি।

আলী হোসেন

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার) হাতে। বিশ্লে...