সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধান - আলী হোসেন
আবির্ভাবের পর মানুষ প্রায় অন্যান্য প্রাণীদের মতই জীবন-ধারণ করত। বেঁচে থাকার জন্য অন্যদের মত খাদ্য সংগ্রহ ও জীবনের নিরাপত্তা বিধানই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু অন্য প্রাণীদের তুলনায় মানুষের চিন্তন ক্ষমতা উন্নত হওয়ায় তারা তাকে কাজে লাগিয়ে খাদ্য উৎপাদন শুরু করে। খাদ্য উৎপাদনকে কেন্দ্র করেই উৎপত্তি হয় ব্যক্তিগত সম্পত্তির। সম্পত্তির উপর অধিকার কায়েম করতে গিয়ে বেধে যায় গোষ্ঠী-লড়াই। এই লড়াই জন্ম দিয়েছে রাজনীতি তথা রাজনৈতিক ক্ষমতার। ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়লাভ করেছে সেই ব্যক্তি, যার পেশী ও মাথার জোর বেশী। সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধানে এই তথ্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
গোষ্ঠী-মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পেশী ও মগজের জোরওয়ালা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে একগোষ্ঠি ভেঙ্গে নতুন নতুন গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। পরবর্তীকালে শুরু হয়েছে এক গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের লাড়াই। লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের পথ বেয়ে সেই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াই আজ বর্তমান চেহারা নিয়েছে। আসলে মানব সভ্যতার ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই ক্ষমতা দখলের লড়াই যা সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধান করার সময় স্মরণ রাখা দরকার।
এবার ইতিহাসের অন্য একটি পাতায় চোখ রাখবো আমরা, সেখানে দেখবো অন্য এক রহস্য।
সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধান : ঐতিহাসিক ও তাত্ত্বিক ভিত্তি
আগেই বলেছি মানুষ অন্য প্রাণীর চেয়ে উন্নত চিন্তাশক্তির অধিকারি। সেই চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বোঝার চেষ্টা করেছে জগতের রহস্য উদ্ঘাটনের। মানুষ জানার চেষ্টা করেছে, কোথা থেকে এল এই মানুষ, কেন মানুষ রোগাক্রান্ত হয়, মারা যায়। কেন প্রাকৃতিক দূর্যোগ হয়। এগুলোর থেকে মুক্তির উপায়ই-বা কী?
এই প্রশ্নেই মানুষকে দুভাগে ভাগ হয়ে যেতে দেখছি ইতিহাসের পাতায়।
এক পক্ষ তাদের গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেখেছেন জগতের প্রত্যেক ঘটনার পিছনে এক বা একাধিক কারণ রয়েছে। তারাই আবিষ্কার করলেন কার্য-কারণ সম্পর্কের। জানালেন, জগতের সমস্ত ঘটনার পিছনে রয়েছে কোন-না-কোন লৌকিক, জাগতিক কিম্বা মহাজাগতিক কারণ, যার সবই বস্তুগত। যারা এভাবে ব্যাখ্যা করলেন, তারা হলেন বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল, যুক্তিবাদি মানুষ। এদের হাত ধরেই জন্ম নিয়েছে বিজ্ঞান। সংখ্যায় এরা সর্বকালেই সংখ্যালঘু।
অন্য পক্ষ জাগতিক রহস্যের পিছনে দেখলেন, অলৌকিক শক্তির হাত। তাকেই নিয়ন্ত্রণকারী ধরে নিয়ে মানুষ তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য শুরু করলো প্রকৃতি পূজা তথা মূর্তিপূজা। মানব প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য হল, সহজ ও অল্প আয়াসে কিংবা অনায়াসে সাফল্য লাভের প্রতি অদম্য টান। সেই টানই মানুষকে অলৌকিক শক্তির প্রতি আসক্ত করে তোলে তাড়াতাড়ি। এদেরই কল্পনায় জন্ম হয়েছে ধর্ম, ঈশ্বর, ধর্মগুরু ও ধার্মীকের। রোগের কারণ খুঁজে তার থেকে মুক্তি খোঁজার চেয়ে কল্পিত শক্তিকে খুশি করার চেষ্টা অনেক সহজ ও দ্রুত ভেবে সংখ্যাগুরু মানুষ (যাদের মাথার জোর অপেক্ষাকৃত কম) ধর্ম আর ধর্মগুরুর স্মরণাপন্ন হতে শুরু করে।
এই সূত্রেই রাজনৈতিক ক্ষমতালোভীদের হাতে চলে এল এক নতুন অস্ত্র; ধর্ম। মানুষকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে পেশীশক্তি ও বৌদ্ধিক শক্তির সাথে যুক্ত হল ধর্ম তথা ধর্ম সংগঠন। শুরু হল মানব সভ্যতার ইতিহাসের নতুন অধ্যায়।
রাষ্ট্রগুরু ও ধর্মগুরু হলেন একজনই, বসলেন দুই আসনেই। যিনিই ধর্মগুরু, তিনিই রাষ্ট্রগুরু। একাধিক উদাহরণ দেওয়া যায়। ৩৩০০ বছর আগের চতুর্থ আমেনহোটেপ মিশরের বহুত্ববাদের জায়গায় নিয়ে এলেন একেশ্বরবাদ। তিনি প্রধান দেবতা আমুন-এর জায়গায় আনলেন সূর্যদেবতা ‘আটেন’কে। নিজের নাম পাল্টে রাখলেন আখেনাটেন অর্থাৎ ঈশ্বর আটেনের পুত্র। লক্ষ্য একটাই। নিজের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করা।
বহু শতাব্দী পর ইউরোপীয় নবজাগরণের হাত ধরে, ধর্ম আর রাজনীতি আলাদা হল। কিন্তু বাকি অংশের অনেক জায়গায় এখনও প্রত্যক্ষ কিম্বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতালোভীরা ধর্মকে কাজে লাগাচ্ছে। আল-কায়দা থেকে আইএসআইএস সেই কাজটাই করছে। মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে তারা। ভারতের রাজনৈতির ক্ষেত্রেও ইদানিং এর বাড়বাড়ন্ত। আধুনিক গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য যা মোটেও সুখবর বয়ে আনছে না। আনার কথাও না।
এভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের কাজে লাগাতে গিয়ে জন্ম নিচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। সুতরাং সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধানে মনে রাখতে হবে এই ধর্মকে হাতিয়ার করার পুরানো কৌশল ব্যবহারের বাড়বাড়ন্ত-এর দিকেও।
তবে এদের উত্থানের ইতিহাস বেশ জটিল। ইসলামের আবির্ভাবের আগের এক হাজার বছর ধরে আরব দুনিয়া ছিল ‘অন্ধকারময় যুগ’ (আইয়াম-এ-জাহেলিয়াত)। হজরত মহম্মদ এই যুগের অবসান চেয়েছিলেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের কর্মময় জীবন তাঁকে শিখিয়েছিল ‘সব মানুষই সমান এবং যে ব্যাক্তি ঈশ্বরের একান্ত অনুগত ও যিনি মানবকল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেন তিনিই শ্রেষ্ঠ মানুষ’। এখানে ঈশ্বরের উল্লেখ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মহম্মদ উপলব্ধি করেছিলে, অন্ধকার থেকে আলোয় আসতে গেলে দরকার সমাজ বিপ্লব, যা করতে দরকার মানুষের নিঃশর্ত সমর্থন। এই সমর্থন পেতে দুটি জিনিস খুবই জরুরী।
১) নতুন ধর্মদর্শন, যা মানুষের কল্যাণকামী, এবং নিজেকে ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার সপক্ষে প্রচার। তাই তাঁর বক্তব্যে ‘ঈশ্বরের একান্ত অনুগত’ কথাটি ব্যবহার করেছেন বারবার এবং নিজে নবী অর্থাৎ ‘আল্লার বার্তাবাহক’ বলে দাবী করেছেন।
২) পুরানো ব্যবস্থা ভাঙতে দরকার রাষ্ট্রশক্তি তথা রাজনৈতিক ক্ষমতা, যা একান্তই জনসমর্থনের উপর নির্ভরশীল। এই দুই প্রয়োজনেই জন্ম নিয়েছে ইসলাম।
অর্থাৎ সমাজের প্রয়োজনে রাজনৈতিক ক্ষমতা আর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজনে নতুন ধর্মদর্শনের জন্ম দিতে হয়েছে তাঁকে।
কিন্তু হজরত মহম্মদের মৃত্যুর পর এই ব্যবস্থায় আস্তে আস্তে পরিবর্তন এসেছে। কিম্বা বলা ভালো, আনা হয়েছে। ‘সমাজের প্রয়োজন’ কথাটা তা তাৎপর্য হারিয়েছে। তার জায়গা দখল করেছে ‘অর্থনৈতিক প্রয়োজন’। ইতিহাস বলছে, নানা টানাপোড়েনের মধ্যেও চারজন খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি মহম্মদের লক্ষ্যটাকে মোটামুটি ঠিক রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে যারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাদের লক্ষ্যটাই পাল্টে গেছে। তাই মহম্মদের পরিকল্পিত সূত্রও পাল্টে গেছে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, যা ইসলামের ভিত্তিকে দৃঢ় করেছিল, তা বেমালুম উবে গেল। জন্ম হল নতুন সূত্রের.........অর্থাৎ আর্থিক ক্ষমতার প্রয়োজনে রাজনৈতিক ক্ষমতা আর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজনে ধর্মের ব্যবহার। এই সূত্রের সূত্রেই ইসলামী ধর্মদর্শন প্রথমে শিয়া-সুন্নি এবং পরে আরও অনেক ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। বলা বাহুল্য, এদের দিয়ে ইসলামী দর্শন ব্যপকভাবে বিকৃত হয়েছে, মূলতঃ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যেই।
তালিবান, আল-কায়দা, কিম্বা আইএসআইএস – এদের উৎপত্তির ইতিবৃত্ত লুকিয়ে রয়েছে এই নয়া সূত্রের মধ্যেই। এই সুত্রেরই আধুনিকতম চেহারা আমরা দেখছি শিয়া-সুন্নির আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের মধ্যেও; সৌদি আরব ও ইরান যার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর বাইরে থেকে এই লড়াইকে মদত দিয়ে ইউরোপীয় ও আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে নয়া সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করার চেষ্টা করছে। ভুলে গেলে চলবে না, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলার যে চেষ্টা আমেরিকা শুরু করেছিল তার মধ্যেও রয়েছে এই সুত্রের ব্যবহার।
কিভাবে? আসুন দেখে নেওয়া যাক এই সংগঠনগুলির জন্মবৃত্তান্তে ইউরো-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী সূত্র।
সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধান : আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ
আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আইএস সৃষ্টি করেছে। যেমন অতীতে করেছিল আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে তালেবানদের। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার ও তৎকালীন সোভিয়েত সমর্থিত কমরেড নজিবুল্লাহ সরকারকে উৎখাত করার জন্য আমেরিকা পাকিস্তানের শরাণার্থী শিবিরের তরুণ ও যুবকদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ওরা বেশিরভাগই ছিল মাদ্রাসার ছাত্র অর্থাৎ তালেব। ওই তালেব থেকেই তালেবান শব্দটি এসেছে। যারা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে দুর্ধর্ষ বাহিনীতে পরিণত হয়ে অতি দ্রুত পুরো আফগানিস্তান দখল করে তালেবান শাসন কায়েম করে। অর্থাৎ আফগানিস্তানে আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছে তালেবান আর তার মদতদাতা দোসর হচ্ছে আমেরিকা। সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধানে ভুললে চলবে না আমেরিকার এই নয়া সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা।
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তালেবান নেতা মোল্লা মহম্মদ উমরকে সাহায্যে করার জন্য ওসামা বিন লাদেনকে তৈরি করে আমেরিকা। লাদেনের সাহায্যেই আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহার করার পর তালিবান শাসন শুরু হয়। ওসামা ফিরে যান সৌদিতে।
এরপর ফিলিস্থিনিদের পক্ষে লাদেন সমর্থন জানালে আমেরিকার বিরাগভাজন হন লাদেন। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান আধিপত্য কায়েম রাখার দ্বিতীয় ও গুরুত্বপুর্ণ সহোযোগি দেশ ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের চিরশত্রু। সুতরাং এমন বন্ধুকে আমেরিকা কোনো মূল্যেই চটাতে চায় না। তাই ‘কাজের সময় কাজী, কাজ ফুরালে পাজি’ হয়ে লাদেন সন্ত্রাসবাদী তালিকাভুক্ত হয়ে গেলেন। লাদেনকে খতম করতে তালিবান নেতা মোল্লা উমরকে লাদেনের বিরুদ্ধে যাওয়ার আহ্বান জানায় আমেরিকা। আফগানিস্তানে তালিবান শাসন প্রতিষ্ঠায় যার সাহায্য নিলেন তার বিরুদ্ধে মোল্লা উমর না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমেরিকার খতম তালিকায় চলে এলো তালেবান নেতা তথা তালেবান শাসনও। দেশে দেশে আমেরিকার মদতপুষ্ট মিডিয়া তালেবান ও লাদেন (আল-কায়দা) বিরোধী অভিযানে নেমে গেলো। তারপরের ঘটনা আমরা সবাই কমবেশি জানি। আমেরিকান মেরিন কমান্ডোদের ‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার’ নাকি লাদেনকে হত্যা করেছে। আলকায়দা শেষ। আল-কায়দা এখন নতুন নামে আসরে আসছে। সৌজন্যে সেই ইউরো-আমেরিকান নয়া সাম্রাজ্যবাদ।
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা এবার দ্রুত ইরাক ও সিরিয়া দখলের জন্য আইএস সৃষ্টি করছে। খোদ ইরাকের উপপ্রধানমন্ত্রী বাহা আল-অরাজী আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এটা স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরাক দখল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রই আইএস সৃষ্টি করেছে। একই কথা বলেছে ভেনিজুয়েলা, ইরান ও রাশিয়া। আইএস সৃষ্টি হচ্ছে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য দখলের চালাকি বা নতু্ন কৌশল, যা ভুলে গেলে সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধানের কাজ মরুতে মহাসাগর খোঁজার মত হবে।
সন্ত্রাসবাদ ও তার উৎস সন্ধান : শিয়া সুন্নী স্বার্থ
শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায় যথাক্রমে ইরান ও সৌদি আরবের মদতে লড়াইয়ে নেমেছে। সিরিয়া ও ইরাকে আইএসআইএস, নাইজেরিয়ায় বোকোহারেম - এই দুই গোষ্ঠি এখন হত্যালীলায় মত্ত। কারণ সেই একই সুত্রের প্রয়োগ; অর্থাৎ আর্থিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মের প্রয়োগ। এখন এটা স্বচ্ছ জলের মতো পরিষ্কার, সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাউয়ি সম্প্রদায়ের রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আইএসকে অর্থ যোগান দিচ্ছে আমেরিকা। ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি অঞ্চলজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে সুন্নি আরব জঙ্গিদের সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা থেকে বেরিয়ে এসে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিছুদিন আগেও সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অব দি ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট বা আইএসআইএল (ইরাকে)। সিরিয়ায় এরাই আইএসআইএস নামে পরিচিত। সারা বিশ্বে এরা সংক্ষেপে আইএস নামে পরিচিত।
ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননের অংশবিশেষ নিয়ে একটি অঞ্চলজুড়ে ‘খিলাফত’ পদ্ধতির ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আইএস। তারা বাগদাদের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতিমধ্যে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে নিয়েছে। সিরিয়ায় সরকারবিরোধী লড়াইয়েও সংগঠনটি প্রভাব বিস্তার করছে। আইএসের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিজেকে তাঁদের অধিকৃত অঞ্চলের ‘খলিফা’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়নকে খতম করার নেশায় আফগানিস্তানের কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে তালিবানের জন্মে মদত দিয়েছে যে আমেরিকা, তারাই আল-কায়দার মাথা লাদেনকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে মাথায় তুলেছে। তারপর কার্যসিদ্ধির পর লাদেন যখন মধ্যপ্রাচ্যের বড় শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তখনই তাঁর মৃত্যু ঘন্টা বেজেছে।
এখানেই মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসী শক্তির চির-সমাধি হতে পারত। কিন্তু না। হয় নি। কারণ, সেই একই সুত্রের প্রয়োগে ব্যস্ত ইউরো-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের (সুত্রের) সক্রিয় উপস্থিতি। আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বার্থে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে জল ঘোলা করা। আর এই ঘোলা জলে মাছ ধরতে ব্যস্ত আমেরিকা ও ইউরোপ। বলার অপেক্ষা রাখেনা এই ‘মাছ’ আসলে ‘মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বিক্রির বাজার’ ও ‘তেল-সাম্রাজ্যে আধিপত্য বিস্তার’ করার পরিকল্পনা।
তাই আলকায়দার শূন্যতা পূরণে আইএস এর জন্ম হয়েছে। এর কার্যকারিতা যখন ফুরোবে তখন আবার জন্ম নেবে নতুন নামে নতুন কোনো ‘বারুদ-ভরা খেলনা পুতুল’ যার রিমোট থাকবে ইউরো-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে।
---------x----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন