ইতিহাসের প্রথম নার্স
গিয়াসুদ্দিন দালাল
![]() |
গিয়াসুদ্দিন দালাল |
কিন্তু ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নার্সিং ইতিহাসে স্থান পাওয়ার অনেক আগে (১,২০০ বছর আগে), রুফায়দা আল-আসলামিয়া নার্সিং এবং সার্জারিতে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেবাব্রতী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
সপ্তম শতাব্দীতে মদিনায় জন্মগ্রহণকারী রুফায়দা আল-আসলামিয়াহ ইসলামের আবির্ভাবের প্রাথমিক যুগে এক গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলা সমাজের একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভূত হন। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে তাঁর যাত্রা শুরু হয় দ্রুত বিকশিত আরব বিশ্বের পটভূমিতে। রোগ নিরাময়ের প্রতি তাঁর আবেগ এবং সহানুভূতি তাঁকে এক অনন্যসাধারণ পথে পরিচালিত করে।
সৌদি আরবের খায়বার প্রদেশ। ইহুদি ও পৌত্তলিকদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয় মুসলিমদের। ওদের অনেক সৈন্য। মুসলিমদের কম। অসম যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যরা আহত হতে লাগল। আহত সৈন্যদের এনে রাখা হতে লাগল মদিনা মসজিদ নিকটবর্তী এক ক্যাম্পে। কারও হাত নেই, তো কারও পা। কারও বা আবার সমস্ত দেহই ক্ষত বিক্ষত।
ডাক্তার চিকিৎসার নিদান দিয়ে চলে যান। সমস্যা হল, কে সময় মত আহত সৈনিকদের ওষুধ খাওয়াবে! পথ্য দেবে! তাদের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে বেঁধে দেবে! কে পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলবে, হে আল্লাহর সৈনিকবৃন্দ! একটু সহ্য কর, তোমরা শীঘ্র সেরে উঠবে। শক্ত হয়ে উঠবে, যুদ্ধে যাবে! কে ভরসা যেগাবে তাদের? স্বাভাবিকভাবেই হতাশা ও আর্তচীৎকারে ভরে ওঠে ক্যাম্প। সেনানায়ক উৎকন্ঠিত হয়ে ওঠেন। দুহাত তুলে পরবরদিগরের কাছে দোওয়া চাইতে থাকেন।
হঠাৎ একদিন পায়ে পায়ে এগিয়ে আসলেন যে সেবাব্রতী নারী, তাঁর নাম রুফাইদা, রুফাইদা আল-আসলামিয়াহ। যেন অন্য আভা ফুটে উঠল তাঁর উপস্থিতিতে। সমস্ত জাহানের করুণা যেন তাঁর চোখে। বিনীত কন্ঠে তিনি বললেন, আল্লা চান তো আমি এদের দেখভাল করতে পারি।
যেন আল্লাহর রহমত নেমে এল যুদ্ধের মাঠে। মোমবাতি হাতে সবার শুশ্রূষার ভার তুলে নিলেন নিজের হাতে। সৈন্যরা তাঁর সেবায় চাঙ্গা হয়ে উঠতে লাগল। হতাশা কাটিয়ে ফিরতে লাগল জীবনে।
সবাই যেন অপেক্ষায় থাকত, কখন প্রদীপের আলো নয়, আশার আলো নিয়ে রুফাইদা তাদের শুশ্রূষায় আসবেন। এভাবে ক্রমে ক্রমে রুফাইদা হয়ে গেলেন One who carries the lamp.
সন ৬২৮ খ্রীস্টাব্দ। হজরত মহম্মদ(সা) খুব খুশী হলেন তরুণীর এই ত্যাগে ও সেবায়। আবার ঘুরে দাঁড়াল মুসলিম যোদ্ধারা, নতুন মনোবল নিয়ে। এভাবেই বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম নার্সের সাথে পরিচয় হল বিশ্ববাসীর।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ হয় সন ১৮৫৩ সালে। আমরা বিশ্ব ইতিহাসের দ্বিতীয় নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে দেখতে পেলাম।
কিন্ত ইতিহাসের পাতায় অমর হয়েও কিছুটা সবার অলক্ষেই থেকে গেলেন রুফাইদা আল আসলামিয়া; বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম নার্স।
---------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন