সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুদীপ্ত ভাস্কর দত্ত


কাল্পনিক আলাপচারিতায় বিশ্বকবি ও বিশ্ব বন্দিত সন্ন্যাসী

[বাংলার নবজাগরণের দুই দিকপাল – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৬১-১৯৪১) ও স্বামী বিবেকানন্দ(১৮৬৩-১৯০২) সমকালিন সময়ে কলকাতায় জন্মেছিলেন। এঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল বা এঁরা আদৌ পরস্পরের পরিচিত ছিলেন কিনা এই নিয়ে বাঙ্গালি সমাজের কৌতূহল আজও সীমাহীন। সন্ন্যাসজীবনের আগে বিবেকানন্দ (তখন, নরেন্দ্রনাথ দত্ত ) ‘সঙ্গীত কল্পতরু’ নামে যে গ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন তাতে বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত স্থান পেয়েছিল। বস্তুতঃ, তিনি কবির কিছু গান শুধু পছন্দই করতেননা, নিজে গাইতেনও। তরুন বয়সে এঁরা দুজনেই কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত বাড়ির গানের আসরে একই সাথে অংশ গ্রহণ করেছিলেন – এমন ঘটনার কথাও জানা যায়। ঠাকুর পরিবারের এক তরুন সদস্য কলেজে নরেন্দ্রনাথের সহপাঠী ছিলেন এবং নরেন্দ্রনাথ তাঁর সাথে দেখা করতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে প্রায়শই যেতেন। ফলে, খ্যাতনামা
আইনজীবী বিশ্বনাথ দত্তের দামাল ছেলে এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের কবিপুত্র পরস্পরকে যে চিনতেন এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। স্বামী বিবেকানন্দ বিদেশ থেকে ফেরার পর ভগ্নী নিবেদিতা ১৮৯৯তে তাঁর কলকাতার বোসপুকুরের বাসগৃহে কিছু জ্ঞানীগুণী মানুষকে এক সান্ধ্য চায়ের আসরে আমন্ত্রন করেছিলেন। সেই টিপার্টিতে বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনেই উপস্থিত ছিলেন কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে তাঁদের মধ্যে বাক্য বিনিময় হয়নি। তবে, রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ বালক নরেন্দ্রনাথকে খুবই স্নেহ করতেন। পরবর্তীকালে, অশীতিপর মহর্ষি বিশ্বজয়ী বিবেকানন্দকে বিশ্বের দরবারে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন ও আশীর্বাদ করেছিলেন। স্বামীজীর তিরোধানের পর কবিগুরু তাঁর উদার প্রশস্তি করেছিলেন - মূলত, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিলন সাধনে তাঁর প্রয়াসের জন্যে এবং প্রত্যেক মানুষই অনন্ত শক্তির আধার – এই বাণী ভারতবাসীকে শোনানোর জন্যে। প্রখ্যাত ফরাসী মনীষী, রোমাঁ রলাঁকে রবীন্দ্রনাথ এও বলেছিলেন, “If you want to know India, study Vivekananda. In him everything is positive and nothing negative.” অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি হয়ে ওঠার বহু আগেই স্বামিজী দেহত্যাগ করেন। সেই কারনে স্বাভাবিক ভাবেই বিবেকানন্দের রবীন্দ্র প্রশস্তি করা হয়ে ওঠেনি। তবে, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ও ভগ্নী নিবেদিতার ওপর লেখা প্রামাণ্য গ্রন্থাদি পাঠ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াই যায় যে, এই দুই মনীষী পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাবই পোষণ করতেন। বিবেকানন্দ বিশ্বজয় করে দেশে ফেরার পর এবং তাঁর তিরোধানের মাঝে যেকোনো সময়ে এই দুই মহাপুরুষের সাক্ষাত হতেই পারতো। সেক্ষেত্রে, তাঁদের কথোপকথন হয়ত এমনি হত। কল্পনা করলেন - সুদীপ্ত ভাস্কর দত্ত ]
কাল: ১৮৯৮ (স্বামী বিবেকানন্দের ভারতে প্রত্যাবর্তনের ১ বছর পর )
সময়: বিকেল
স্থান: বাগবাজার খেয়া ঘাট
স্বামীজী খেয়ার জন্য অপেক্ষারত, উদ্দেশ্য গঙ্গা পথে বেলু যাওয়া। কবি এখন কলকাতায়, অভ্যেসমত গঙ্গাপারে বৈকালিক ভ্রমনে। হঠাৎ দুজনের দেখা।
রবীন্দ্রনাথ (৩ বছর) : আরে, নরেন যে। তোমার সাথে এভাবে দেখা হবে ভাবতেই পারিনি! এই দেখো, তোমায় আমি 'নরেন' বলে ডেকে ফেললুম।
বিবেকানন্দ (৩৫ বছর) : রবিদাদা, আমি কলকাতার সিমলের সেই নরেন ই আছি, আমায় আপনি স্বামীজি বা বিবেকানন্দ বলে ডাকলে খুব অস্বস্তি হবে। কলেজ জীবনে কতবার জোড়াসাঁকোতে আপনাদের বাড়ি গিয়েছি...
র: তুমি এখানে?
বি: ঐ... খেয়া ধরে বেলুড় যাব, ওখানে ঠাকুরের নামে একটা মঠ করেছি জানেন নিশ্চয়ই, গঙ্গা পথে যেতেই আমার ভালো লাগে, আপনি?
র: শুনেছি,..... কলকাতায় থাকলে এই সময় আমার গঙ্গার ধারে হাঁটতে ভালো লাগে, এই দিকটা নির্জন, তাই এসেছিলাম। তোমার খেয়ার তো দেখা নেই, চলো ঐখানে বসে একটু কথা বলা যাক..( দুজনে গিয়ে গঙ্গার ধারে একটা অশ্বথ্ব গাছের তলায় বসেন)।
র: নরেন, আমেরিকার ধর্ম মহাসভায় অসাধারণ বক্তব্য রেখে তুমি ভারতের উদার সনাতন ধর্মকে বিশ্বের দরবারে যেভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছ তাতে আমি গর্ব বোধ করেছি, পাশ্চাত্যের অভিজ্ঞতার কথা কিছু বল।
বি: ঠাকুরের আহ্বানে এটা আমি করেছিলাম, আমায় এটা করতেই হত। কিন্তূ এখনো অনেক কাজ বাকি। আমেরিকা, ইউরোপের বহু নগরী ঘুরে তাদের দরিদ্রদেরও সুখ স্বাছন্দ্য আর বিদ্যা দেখে আমাদের গরিবদের কথা মনে পরে যাওয়ায় অশ্রু বিসর্জন করতাম। কেন এই পার্থক্য হলো? ...... শিক্ষা...... জবাব পেলাম।
র: ঠিক ই বলেছ, আমার ষোলো বছর বয়সে বাবামশায় আমাকে বিলাতে পাঠিয়েছিলেন সত্যেন দাদার সঙ্গে থাকতে আর ওখানকার বিদ্যালয।।পঠন পাঠন করতে। ওদের দেশের মানুষদের সামগ্রিক উন্নয়নের মূল কারণ যে শিক্ষা তা আমি সেই সময়ই উপলব্ধি করেছিলাম। কিন্তু নরেন, শিক্ষা বলতে তুমি কি বোঝো?
বি: শিক্ষা হচ্ছে মানুষের ভিতর যে পূর্ণতা প্রথম থেকে বিদ্যমান, তার ই প্রকাশ। এই প্রকাশ সাধনে সাহায্য করাই শিক্ষকের কাজ। কিন্তু আমাদের বালকদের যে বিদ্যা শিক্ষা হচ্ছে তা একান্তই নেতি ভাবনা পূর্ণ। শিক্ষক মশাই কিছু তথ্য ছাত্রদের মগজে জোর করে ঢুকিয়ে দিতে চান আর নিরুপায় বালকের দল সেটাই গ্রহন করতে বাধ্য হয়।প্রকৃত মানুষ গড়ার শিক্ষা আমাদের বিদ্যালয় গুলোতে হয় না।
র: হ্যাঁ, আমার নিজের বিদ্যায়-জীবনের অভিজ্ঞতা তো খুবই খারাপ, বাবামশায় আমাকে বেঙ্গল একাডেমী এবং ওরিয়েন্টাল একাডেমী এই দুই স্কুলেই ভর্তি করিয়েছিলেন, কোনটার পরিবেশই আমার ভালো লাগেনি। খালি চুপ করে শিক্ষক মশায়ের গতানুগতিক পাঠ শোনা আর মুখস্থ্ করে পরের দিন তা উগরে দেওয়া। তার অন্যথা হলেই বেত্রাঘাত। বালকদের নিজের মত প্রকাশের কোনো অধিকার নেই। তাই শেষ পর্যন্ত আমার আর বিদ্যালয় শিক্ষা হয়নি, পিতৃদেব বাড়িতেই আমার শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।
বি: ভারতবর্ষে বর্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে তাতে কিছু কেরানি আর দুষ্টু উকিল ছাড়া আর কিছু বেরোবে না। যাতে চরিত্র তৈরী হয়, মনে শক্তি বাড়ে, বুদ্ধির বিকাশ হয়, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে এই রকম শিক্ষা চাই। শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার সময় দুটো বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, প্রথমত বিশ্বাস করতে হবে যে প্রত্যেক শিশুই অনন্ত ঐশ্বরীয় শক্তির আধার স্বরূপ, আর সেই শক্তিকে জাগ্রত করার চেষ্টাই আমাদের করতে হবে। দ্বিতীয়ত:, তারা যাতে নিজেরা চিন্তা করতে শেখে সেই বিষয়ে তাদের উৎসাহ দিতে হবে। যদি এভাবে ছেলেদের শিক্ষা দেওয়া হয় তবেই তারা মানুষ হবে এবং জীবন সংগ্রামে নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সমর্থ হবে
র : বাহ! তোমার শিক্ষা সম্পর্কে এই ধারণা গুলো আমার মনের কথা। আমি মনে মনে স্থিরই করেছি ছেলেদের পূর্নাঙ্গ শিক্ষা প্রদানের জন্য একটি আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন করব।
বি : এ তো অতি উত্তম ভাবনা। আপনি সাহিত্য সৃষ্টি ছাড়াও যে প্রকৃত শিক্ষা প্রসারে উদ্যোগী হযেছেন তাতে আমি খুব ই খুশি হয়েছি। এই অলস, অকর্মন্য, মন্দভাষী, ঈর্ষা পরায়ন, ভীরু এবং কলহপ্রিয় জাতিকে জাগাতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। কোথায় স্থাপন করবেন আপনার আশ্রম বিদ্যালয়?
র : কলকাতার এই নগর জীবনের দুষণ, ইঁট কাঠের জঙ্গল আর কোলাহল থেকে দূরে বীরভূমের বোলপুরের কাছে। ছেলেবেলা থেকেই মাতৃসমা প্রকৃতি সেবা পাওয়ার একটা খিদে আমার আছে। আর তাই আমি এই জায়গাটা নির্বাচন করেছিলাম যেখানে আকাশ দিগন্তের দিকে অবাধে প্রসারিত হয়েছে, সেখানে মন তার স্বপ্ন তৈরী করার জন্য ভয়লেশহীন স্বাধীনতা পায়। আমার এই নতুন বিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রদান করা হবে গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে, নিজস্ব উদ্ভাবনী চিন্তাধারার সঙ্গে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা পদ্ধতির মিলন ঘটিয়ে। সুযোগ থাকলে ছাত্রদের পরানো হবে খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির কোলে। আমি ইতিমধ্যেই কয়েকটি গান, গীতিনাট্য আর নাটক রচনা করেছি যাতে ছাত্ররা এগুলোতে সাগ্রহে আংশগ্রহন করতে পারে এবং তারই মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে। আমি মনে করি শিক্ষা হবে জীবনেরই একটা অংশ। জীবন থেকে আলাদা বা বাস্তবতা বর্জিত নয়। আমার বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছাত্রাবাসে থাকবে, এবং তাদের একটি সম্পূর্ণ জীবন যাপন করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাদের যতদুর সম্ভব স্বাধীনতা দিতে হবে আর তাদের সব কাজকর্ম যাতে চিত্তাকর্সক হয়ে ওঠে তার খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের স্বাভাবিক আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে যেমন- প্রকৃতির সৌন্দর্য় উপভোগে, আশেপাশের গ্রামগুলোতে, সাহিত্যে, নাটকে এমনকি গান শোনাতে। শুধু শ্রেণী কক্ষে পাঠদানের মধ্যে দিয়ে এদের শিক্ষা হোক তা আমি চাইনা।
বি: রবিদাদা, আপনার আশ্রম বিদ্যালয়ের এই আইডিয়াটা আমার খুবই ভালো লাগলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি এটা শুরু করে দিন। তবে স্বদেশী বিদ্যার সঙ্গে ইংরেজি, বিজ্ঞান, কারিগরী শিক্ষা - সবই শেখাতে হবে। পরবর্তিকালে কৃষি, বানিজ্যকেও পাঠক্রমের মধ্যে আনতে হবে। আমি চাই টোটাল এডুকেশন, যাতে ছাত্ররা পাশ করে বেড়িয়ে চাকরি না পেলেও দু পয়সা নিজে করে খেতে পারে।
র : নিশ্চয়ই। আমি পাশ্চাত্য থেকেও কিছু অতিথি অধ্যাপক আনিয়ে আমার বিদ্যালয়তে শিক্ষাদান করাতে চাই, এর ফলে পাশ্চাত্যের শিক্ষার আধুনিক দিকগুলো সম্পর্কে আমাদের ছাত্ররা অবহিত হবে এবং তাদের মধ্যে অন্তার্জাতিক মানসিকতাও গড়ে উঠবে, যা তাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরি।
বি : অসাধারণ ভাবনা। তবে,পাশ্চাত্যকে অন্ধের মত অনুকরণ না করে তার ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহন করাই হবে আমাদের উদ্যেশ্য।
র : নরেন, জাতীয়তাবাদী সংস্কারের ঊর্ধে উঠে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের মিলন ও যে ঘটানো যায় তুমিই তো তার পথ প্রদর্শক। আমেরিকাতে যে ঝড় তুমি তুলেছিলে তাতে সত্যিই তুমি বিশ্বনাথবাবুর যোগ্য সন্তান হিসেবে নিজেকে প্রমা করেছ। তোমার ভারত প্রেম, ভারতের জন্য এই আত্মত্যাগ অসাধারণ, অতুলনীয়। ইতিমধ্যেই তোমার প্রকাশিত লেখাগুলো আমি পড়ে ফেলেছি। আমি মনে করি ভারতকে জানতে হলে তোমায় জানতে হবে, তোমার মধ্যে সব কিছুই ইতিবাচক, নেতিবাচক কিছু নেই। তুমি ভারতমাতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান। নরেন,তুমি দীর্ঘজীবি হও।
বি: (হেসে) দীর্ঘজীবি? I shall not cross forty. আমার আর বেশিদিন নেই, তবে আমার শরীর চলে গেলেও আমার সন্যাসী ভাইরা আমার অপূর্ণ কাজকে পূর্ণ করবে। কিন্তু আমি জানি আপনি দীর্ঘজীবি হবেন রবিদাদা। You will be recognized as the most versatile and greatest creative genius of India, perhaps of the world. আগামী পনের ষোলো বছরের মধ্যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবির শিরোপা আপনি পাবেন।
র : (বিস্মিত) কি করে বলছ নরেন? তুমি কি জ্যোতিষ চর্চাও করছ!
বি: না, সম্পূর্ণ পবিত্র আধ্যাত্মিক জীবন যাপন, যোগ সাধনা এবং আমার গুরুদেবের আশীর্বাদ আমার মধ্যে ভবিষ্যত দর্শনের ক্ষমতা দিয়েছে। আমি আপনাকে এও বলে যাচ্ছি আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ভারতবর্ষ স্বাধীন হবে।
বিস্মিত রবীন্দ্রনাথ বিবেকানন্দের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। একটি নৌকো এসে তীরে ভেরে... মাঝি ডাক দেয়...
মাঝি: বাবু, দক্ষিণেশ্বর বেলুড় যাওয়ার এইটাই শেষ খেয়া, গেলে চলে আসুন।
র: নরেন, যাও, তোমার নৌকো।
বি: আপনি?
র: আমি হাঁটতে হাঁটতে জোড়াসাঁকো ফিরে যাব।
বি: রবিদাদা, আপনার অধ্যাত্ম রসে সমৃদ্ধ গানগুলোই আপনাকে বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠ কবির স্বীকৃতি এনে দেবে। আপনার একটা গান তো আমি প্রায়ই গাই... আহা...গান টা যেন আমার জন্যই লিখেছিলেন।
র: কোন গান টা নরেন?
দুজনেই উঠে দাঁড়ান, নরেন্দ্রনাথ নৌকোর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলেন......
বি: এই গানটা যখন আমি চোখ বুজে গাই, আমি আমার গুরুদেবকে দেখতে পাই ..(এবার বিবেকানন্দ উদাত্ত কন্ঠে গাইতে শুরু করেন এবং গাইতে গাইতে নৌকোয় উঠে । পড়েন... তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা, এসমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা ”.
নৌকো ছেড়ে দেয়... বিবেকানন্দ স্মিত হাস্যে রবীন্দ্রনাথের দিকে তাকিয়ে গেয়ে চলেন... নৌকো এগিয়ে যায়... রবীন্দ্রনাথ প্রশান্ত মুখে বিবেকানন্দের দিকে তাকিয়ে থাকে। অস্তমিত সুর্য্যের আভায় দিগন্ত রাঙিয়ে যায়...।
---*---

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বুলবুল আহমেদ

সংস্কৃতির নিঃসঙ্গ পথিক মন তুমি কৃষি-কাজ জাননা, এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা। --- রাম প্রসাদ সেন মানব-জনমে ফসল ফলে না নানা কারনে, সোনা ফলা অনেক পরের ব্যাপারে। সবচেয়ে বড়ো প্রতিরোধের সৃষ্টি করে সামাজিক ও রাষ্ট্রিক প্রতিবেশ। সেখানে মননের অভাব, প্রীতির অভাব, প্রেমের অভাব, বন্ধুতার অভাব সংযমের অভাব, সবচেয়ে বড় অভাব আত্মমর্যাদার। আর এতগুলো না-থাকা জায়গা করে দেয় নিখিল নিচতা, শঠতা, সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতার জন্য। নিজের জীবনে মানুষের অবাধ অধিকার। জগৎকে মেরামত করে এইসব হীনবৃত্তি দূর করার চেয়ে নিজেকে সংশোধন করা অধিক প্রয়োজন। এই কাজে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রয়েছে সংস্কৃতি চর্চার। ধর্ম নয়, রাজনীতি নয়, মতবাদী নয়, মুক্তির পথ দেখায় সংস্কৃতি –  মানুষ নিজেকে খুঁজে পায়। এই কথা বলেছেন মোতাহার হোসেন চৌধুরী (১৯০৩- ৫৬) একান্ত নিভৃতে ‘সংস্কৃতি-কথা’ প্রবন্ধ সংকলনে। তাঁর ভাবনার আকাশে মেঘের মত ছায়া ফেলেছেন ক্লাইভ বেল ও বার্ট্রাণ্ড রাসেল। তিনি আমাদের শুনিয়েছেন শুভবোধের, নিরঞ্জন বুদ্ধির, উচ্চকিত যুক্তির ও ব্যক্তিপ্রত্যয়ের কথা।

সত্যরঞ্জন বিশ্বাস

প্রেক্ষিত চড়কঃ মুসলিম ও অন্যান্য অনুষঙ্গ বর্ষশেষের উৎসব হিসাবে ‘ চড় ক ’ বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি লোকোৎসব। গ্রামবাংলার নিম্নবর্গীয় শ্রমজীবি মানুষেরাই চড়ক উৎসবের মূল হোতা। দরিদ্রদের এই মহোৎসবকে বসন্তোৎসব হিসাবেও গণ্য করা যায়।

আবদুল হক

একজন গোবিন্দ দেব ও তাঁর নীরবতা দিবস গোবিন্দচন্দ্র দেব কেবল পণ্ডিত ও দার্শনিক ছিলেন না, জীবনযাপনে আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন একজন পরহেযগার মানুষ। নীরব ধ্যানী, নিবিষ্ট চিন্তক, নিভৃত সাধক। আমরা কেউ পুণ্যবাদী, কেউ পুঁজিবাদী। তিনি এ দুয়ের বাইরে গিয়ে, উর্ধে উঠে, হয়েছিলেন মানুষবাদী।