সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঊনবিংশ শতাব্দীতে সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও নারী সমাজের অংশ গ্রহণ

লিখেছেন সুতপা ভট্টাচার্য :

সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও নারী সমাজের অংশ গ্রহণ 

সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও নারী সমাজের অংশ গ্রহণ

সুতপা ভট্টাচার্য

লিখেছেন  সুতপা ভট্টাচার্য :

ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে সমাজ সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকা থাকলেও আন্দোলনের মূল স্রোতে ছিলেন পুরুষরা। এই আন্দোলন আদেও নবজাগরণ কিনা তা নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে প্রবল বিতর্ক আছে। বিনয় ঘোষ এই নবজাগরণকে ‘অতি-কথা’ বলে চিহ্নিত করেছেন। সুশোভন সরকার তার Notes on Bengal Renaissance গ্রন্থে এবং পরবর্তীকালে একাধিক প্রবন্ধে এ বিষয়ে তার মন্তব্য রেখে গেছেন।

তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর এই সংস্কার আন্দোলন ‘নবজাগরণ’ বা ‘রেনেসাঁস’ কি না সে বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও তা যে সমাজের গভীরে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল সে বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই। সাধারণ ভাবে ধরে নেওয়া হয় এই আন্দোলনে পুরুষরাই ছিলেন মূল চালিকাশক্তি এবং আন্দোলনের কর্মস্রোতে মহিলারা ছিলেন নিতান্তই নিষ্ক্রিয়। সম্ভবত তাদের নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক সম্বন্ধে তারা ছিলেন সম্পূর্ণ অনবহিত। আসলে সমাজ সংস্কারকেরা মহিলাদের সঙ্গে তাদের নিজেদের বিষয়ে আলোচনা করার তেমন কোন প্রয়োজন বোধ করেননি। কারণ তাঁদের ধারণা ছিল যে, মহিলাদের অবস্থার উন্নতি করার প্রচেষ্টা তাঁরা মেনে নেবেন। তবুও সীমিতভাবে হলেও সমসাময়িক সংস্কার আন্দোলনের প্রতি মহিলারা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। এই প্রতিক্রিয়া ছিল পুরুষদের প্রতিক্রিয়া থেকে ভিন্ন প্রকৃতির। তার কারণ পুরুষদের কাছে মহিলাদের অবস্থার উন্নতি তাদের কর্ম জীবনের একটা অংশমাত্র। কিন্তু মহিলাদের কাছে তা ছিল সামগ্রিক অস্তিত্বের লড়াই। এই সংস্কার আন্দোলনের প্রতি মহিলাদের মনোভাব থেকে আধুনিকতার প্রতি মহিলাদের মনোভাব কেমন ছিল তা কিছুটা আন্দাজ করা যায়।

উনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকেই কৌলীন্য প্রথার বীভৎসতা ও তা দূর হবার সম্ভাবনায় আনন্দ প্রকাশ করে মহিলারা লেখনী ধারণ করেছিলেন। কৌলিন্য প্রথার বিরুদ্ধে মহিলাদের ভূমিকা নিয়ে ঐতিহাসিক তপন রায়চৌধুরী তার বিখ্যাত প্রবন্ধ, যা Modern Asian Studies এ প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানে সুবিস্তৃত আলোচনা করেছেন। সংবাদ কৌমুদী পত্রিকার শ্রীমতি অমুকী দেবী এই সংক্রান্তঃ একটি চিঠি লেখেন, যেখানে তার প্রকৃত নাম ও বাসস্থান গোপন করা হয়েছিল। অমুকী দেবীকে নিয়ে মঈন জালাল চৌধুরী ২০১১ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ইন্দোনেশিয়া এবং অসলো ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে জাকার্তায় ‘Conference on Media, Extremism and Freedom of Expression’ সম্মেলনে তাঁর গবেষণা পত্রে তাঁর অসুবিধাগুলি আলোচনা করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন অমুকী দেবী যে ধারার সূত্রপাত করেছিলেন তা এখনও ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মহিলারা চালিয়ে যাচ্ছেন। জালালের মতে, এটি হলো freedom of speech। যদিও এই freedom of speech উনবিংশ শতাব্দীর বাংলায় এতটা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব হয়নি। জালাল এ কথা স্বীকার করেছেন যে, গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এই freedom of speech -এর ধারণাটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। ২০০৯ সালের McNair এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন (Brian McNair, Journalism & Democracy In Wahl-Jorgensen and Hanitzsch, Thomas eds. Handbook of Journalism Studies, New York: Routelege)। জালাল বলছেন “ In 1831- the letter, published in Sambad- Kaumudi” might be the first letter written by woman who had to write it with a pseudo name ‘ Amuki Devi’ “। জালালও এই কৌলিন্য প্রথার বীভৎসতা ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে ‘The harm caused by kulin marriage system’. অর্থাৎ তপন রায়চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিফলন জালালের লেখায় স্পষ্ট বোঝা যায়।

এই প্রসঙ্গে সংবাদ কৌমুদী সম্বন্ধে দু-চার কথা বলা আবশ্যক। কারণ উনবিংশ শতাব্দীর সমাজ সংস্কার আন্দোলন, যা রেনেসাঁ বা নবজাগরণ বলে কথিত, সেই সমাজ সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যে ব্যক্তির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি হলেন ভারত পথিক রামমোহন রায়। রাজা রামমোহন রায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত সংবাদ কৌমুদী পত্রিকায় একাধিক প্রবন্ধে সমাজ সংস্কার নিয়ে তার ভাবনা তুলে ধরেছিলেন। যদিও তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধের ব্যাপারেই তিনি বেশী মুখর ছিলেন। সংবাদ কৌমুদীর সঙ্গে সঙ্গে ডিরোজিওর অন্যতম শিষ্য রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর জ্ঞানান্বেষণ এবং শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পাদিত সোমপ্রকাশ-এ উনবিংশ শতাব্দীর সমাজ সংস্কারের চিত্র ধরা পড়ে। এই সকল পত্রিকায় অমুকী দেবীর মতো একাধিক মহিলা তাদের নিজস্ব নাম গোপন রেখে কৌলিন্য প্রথা ও পুরুষের ব্যভিচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের অস্বাক্ষরিত চিঠি পাঠান। তবে এই চিঠির মাত্রা বেশি লক্ষ্য করা যায় সমাচার দর্পণ পত্রিকায়। সমাচার দর্পণ পত্রিকা মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক যা ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সকল মহিলাদের মূল বক্তব্যই ছিল বিধবারা যাতে বিবাহ করতে পারে। তাঁরা এরকম দাবিও করেছিলেন যে, শাস্ত্রে বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে যুক্তি আছে।

বিধবা বিবাহ প্রচলন করার জন্য যে ব্যক্তির নাম উনবিংশ শতকের সমাজ সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত, তিনি হলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরের ভূমিকা নিয়ে ঐতহাসিক মহলে নানা বিতর্ক রয়ে গেছে, ঐতিহাসিক অশোক সেন বিদ্যাসাগরকে ‘ illusive milestone ’ বলে চিহ্নিত করলেও অধ্যাপক অমলেশ ত্রিপাঠী তাঁকে ‘Traditional Modernizer’ ছাড়া অন্য কিছু বলতে চাননি। সাম্প্রতিককালের জেরাল্ডিন ফরবস তাঁর Women in Modern India গ্রন্থে বিদ্যাসাগর ও সমাজ সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। Kumkum Sangeri, Sudesh Vaid Re-casting women’- Essays in Colonial History ‘ গ্রন্থে এই বিষয়ে সুবিস্তৃত আলোচনা করেন। বিদ্যাসাগরের নিজের লেখা Marriage of Hindu Widows , যা ১৯৭৬ সালে কলকাতা কে পি বাগচী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানে এই বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে- বিপক্ষে যুক্তি বিদ্যাসাগর নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে Uma Chakroborty , Charles Hemsaith বিদ্যাসাগরের এই বক্তব্যকে নিয়ে গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণ করেছিলেন।

এখন আলোচনা করা দরকার বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রচলন করার জন্য কিভাবে চেষ্টা করেছিলেন, রক্ষণশীলরা কিভাবে তার বিরোধিতা করেছিলেন এবং সর্বোপরি বিধবা বিবাহ সমাজে প্রচলিত না হলে কতটা অন্যায় হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট অভিমত জানিয়েছিলেন মেদিনীপুরের কয়েকজন বিধবা। এই প্রসঙ্গে মহেশ চন্দ্র দে তাঁর ‘ A sketch of the conditions of the Hindoo Woman ‘ প্রবন্ধে, যা গৌতম চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত Awakening in the Early Early Nineteenth Century গ্রন্থ তে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। নীরা দেশাই Women in Modern India ,এমনকি post-modernist ঐতিহাসিক পার্থ চ্যাটার্জি তাঁর ‘ The Nationalist Resolution of the Womens’ Question প্রবন্ধে তাত্ত্বিক গবেষণা করেছেন।

মেদিনীপুরের বিধবারা বিধবা বিবাহের জন্য যে কারণ দর্শে ছিলেন তা পুরুষের মতেরই অনুরূপ ছিল। এটা লক্ষণীয় বিষয় যে, মেয়েরা এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন সিদ্ধ হওয়ার পর থেকে এর স্বপক্ষে মেয়েদের লেখার সংখ্যাধিক্য ঘটে। উনবিংশ শতাব্দীর মহিলাদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে কলকাতার বামাবোধিনী সভার মুখপত্র ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’তে বলা হচ্ছে, ‘ one of the most important periodicals on the condition and social status of women in 19th century. It was the early period of womens’ education when Bamabodhini came into circulation’. এই পত্রিকার সম্পাদক উমেশচন্দ্র দত্ত তাঁর সম্পাদকীয় মন্তব্যে তির্যক ভাষায় বিধবা বিবাহের সপেক্ষে তার বক্তব্য পেশ করেছিলেন। এক কথায় বলা যায়,’ Bamabodhini brought both conservative and liberal writers in its fold. Its subjects covered religion, ethics, science, history, childcare, women’s’ education and so on’। ঐতিহাসিকদের ভাষায়, “ The Bamobodhini witnessed a turning point in our history and recorded in its pages the womens’ role in a changing society. It was always vocal about discrimination against women”। ১৮৭৬ সালে বামাবোধিনী পত্রিকায় সারদা দেবী একটি রচনা লেখেন, যেখানে তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, যেহেতু নারী ও পুরুষ সমান সেহেতু স্ত্রী বিয়োগে স্বামী যদি বিবাহ করতে পারে, তাহলে একজন বিধবাও বিবাহ করতে পারবে।

বিদ্যাসাগর যখন আইন করে বহুবিবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করেন তখন বুদ্ধিজীবি মহল-এর একাংশ তাঁর এই প্রচেষ্টাকে সমালোচনা করেছিলেন। এদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বিদ্যাসাগরকে সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং তাদেরই একজন ছিলেন লক্ষীময়ী দেবী।

এ পর্যন্ত মহিলাদের রচনা থেকে দেখা গেল যে, তারা সমাজের প্রায় সমস্ত কু-প্রথা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে ছিলেন। কাজেই মহিলারা তাদের সম্পর্কিত সংস্কার প্রয়াসে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বা তাদের এ বিষয়ে কোন সচেতনতা ছিল না এমন সিদ্ধান্তে আসা সঠিক নয়। তবে একথা সত্যি যে, তাদের ভাবনাচিন্তার বেশিরভাগ জুড়েই ছিল বিধবাদের দুঃখময় জীবন। তাদের লেখা থেকে বিধবাদের যে জীবন-ছবি ফুটে ওঠে তা যথার্থই মর্মবিদারক। কেশবচন্দ্র-এর মা সারদাসুন্দরী দেবী দেওয়ান রামকামাল সেন-এর পুত্রবধূ ছিলেন। তাঁর আত্মকথায় তাঁর বৈধব্য জীবনের যে ছবি ফুটে উঠেছে তা এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। তার মতো ধনী পরিবারের বধূদেরও বৈধব্য অবস্থায় যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হতো এই আত্মকথায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কাশস্বরী দেবীর মতো মহিলা এ ক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত ছিলেন। ব্রাহ্ম সমাজ যে বিধবাদের বড় আশ্রয় হতে পারে ১৮৫৮ সালে শ্রীমতি সরস্বতী সেন তা বলে গিয়েছিলেন। বাল্যবিধবা সরস্বতী শিক্ষকতা করতেন। তিনি বেথুন স্কুলে ন’বছর শিক্ষকতা করেন। সেখানকার বোর্ডিংয়ে থাকতেন এবং ব্রাহ্মমন্দিরে উপাসনা করতেন। কেশব চন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করার পর যখন সমাজ সংস্কার ব্রাহ্মদের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি হয়ে দাড়ালো তখন তারা নিজ উদ্যোগে বিধবা বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন। মহিলারাও এ বিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। যেমন দুর্গামোহন দাসের স্ত্রী ব্রহ্মময়ী নিজ উদ্যোগে বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন। এই বিবাহে গোলমালের আশঙ্কা থাকায় তিনি পুলিশের সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন। ব্রহ্মময়ী মেয়েদের স্বনির্ভরতার বড় সমর্থক ছিলেন। কৌলিন্য ও বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধেও ব্রহ্মময়ী তাঁর সক্রিয় উদ্যোগের স্বাক্ষর রাখেন। একদিকে যেমন ব্রাহ্ম সমাজ সংস্কারক রা বিধবা বিবাহ দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন অন্যদিকে তেমনি রক্ষণশীল হিন্দুরা বিধবাদের পালনীয় কর্তব্য রীতিনীতি বজায় রাখার সপক্ষে ছিলেন।

কাজেই বিধবা বিবাহ সম্পন্ন করা বিংশ শতকের প্রথম ভাগেও অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল. অর্থাৎসমাজ সংস্কারকরা যাই ভাবুন মেয়েরা তাদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে শুধু চিন্তা করেনি, তারা সাধ্যমত তার সমাধানের উপায় নির্ধারণ করার চেষ্টাও করেছিলেন। তাই সমাজ সংস্কার কর্মসূচিতে মেয়েদের কোন ভূমিকা ছিল না এবং তারা নিছক নিষ্ক্রিয় সংসকার যোগ্য বিষয় ছিলেন। এ ধারণা তাঁর তারা নিজেরাই ভেঙে দিয়ে ছিলেন। তবু ঊনবিংশ শতাব্দীর পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ সংস্কার কর্মসূচিতে মেয়েদের সক্রিয় অংশগ্রহণ পুরুষের কাছে ছিল অচিন্তনীয় ও অপ্রত্যাশিত।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

এই প্রবন্ধটি তৈরি করার জন্য আমি ডক্টর সিদ্ধার্থ গুহরায় ও ডক্টর দেবশ্রী দের কাছে বিশেষভাবে ঋণী.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বুলবুল আহমেদ

সংস্কৃতির নিঃসঙ্গ পথিক মন তুমি কৃষি-কাজ জাননা, এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা। --- রাম প্রসাদ সেন মানব-জনমে ফসল ফলে না নানা কারনে, সোনা ফলা অনেক পরের ব্যাপারে। সবচেয়ে বড়ো প্রতিরোধের সৃষ্টি করে সামাজিক ও রাষ্ট্রিক প্রতিবেশ। সেখানে মননের অভাব, প্রীতির অভাব, প্রেমের অভাব, বন্ধুতার অভাব সংযমের অভাব, সবচেয়ে বড় অভাব আত্মমর্যাদার। আর এতগুলো না-থাকা জায়গা করে দেয় নিখিল নিচতা, শঠতা, সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতার জন্য। নিজের জীবনে মানুষের অবাধ অধিকার। জগৎকে মেরামত করে এইসব হীনবৃত্তি দূর করার চেয়ে নিজেকে সংশোধন করা অধিক প্রয়োজন। এই কাজে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রয়েছে সংস্কৃতি চর্চার। ধর্ম নয়, রাজনীতি নয়, মতবাদী নয়, মুক্তির পথ দেখায় সংস্কৃতি –  মানুষ নিজেকে খুঁজে পায়। এই কথা বলেছেন মোতাহার হোসেন চৌধুরী (১৯০৩- ৫৬) একান্ত নিভৃতে ‘সংস্কৃতি-কথা’ প্রবন্ধ সংকলনে। তাঁর ভাবনার আকাশে মেঘের মত ছায়া ফেলেছেন ক্লাইভ বেল ও বার্ট্রাণ্ড রাসেল। তিনি আমাদের শুনিয়েছেন শুভবোধের, নিরঞ্জন বুদ্ধির, উচ্চকিত যুক্তির ও ব্যক্তিপ্রত্যয়ের কথা।

আবদুল হক

একজন গোবিন্দ দেব ও তাঁর নীরবতা দিবস গোবিন্দচন্দ্র দেব কেবল পণ্ডিত ও দার্শনিক ছিলেন না, জীবনযাপনে আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন একজন পরহেযগার মানুষ। নীরব ধ্যানী, নিবিষ্ট চিন্তক, নিভৃত সাধক। আমরা কেউ পুণ্যবাদী, কেউ পুঁজিবাদী। তিনি এ দুয়ের বাইরে গিয়ে, উর্ধে উঠে, হয়েছিলেন মানুষবাদী।

সত্যরঞ্জন বিশ্বাস

প্রেক্ষিত চড়কঃ মুসলিম ও অন্যান্য অনুষঙ্গ বর্ষশেষের উৎসব হিসাবে ‘ চড় ক ’ বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি লোকোৎসব। গ্রামবাংলার নিম্নবর্গীয় শ্রমজীবি মানুষেরাই চড়ক উৎসবের মূল হোতা। দরিদ্রদের এই মহোৎসবকে বসন্তোৎসব হিসাবেও গণ্য করা যায়।