গোবিন্দচন্দ্র
দেব কেবল পণ্ডিত ও দার্শনিক ছিলেন না, জীবনযাপনে আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন একজন
পরহেযগার মানুষ। নীরব ধ্যানী, নিবিষ্ট চিন্তক, নিভৃত সাধক। আমরা কেউ পুণ্যবাদী,
কেউ পুঁজিবাদী। তিনি এ দুয়ের বাইরে গিয়ে, উর্ধে উঠে, হয়েছিলেন মানুষবাদী।
মানুষকে তিনি স্থাপন করেছিলেন চিন্তার কেন্দ্রে। তাই তাঁর চিন্তাভাবনাকে বলা হয় মানবতাবাদী দর্শন। সেই দর্শনে, বলা হয়তো বাহুল্য, ঈশ্বর দৃষ্ট, স্বমহিমায়। স্রষ্টার ধ্যানে দীপ্ত ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত তাঁর দর্শন মানবজাতির চিন্তার সঞ্চয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। ভাববাদ ও বস্তুবাদ– দর্শনের এ দুই মূল ধারার ধারাবাহিক বৈরিতা চিরাগত। দু’টোই সত্য, তা নয়– তবে দুয়েই সত্য আছে। যদিও বস্তুবাদ একচোখা, আর ভাববাদ একরোখা। কিন্তু সত্যের প্রকৃতি সতত এক। প্রকৃত সত্য কখনো প্রকৃত সত্যের বিরোধী হতে পারে না। আর হলেও সে বিরোধ প্রকৃত নয়, আপাত। গোবিন্দ দেব এ দুই ধারা অনেক ঘেঁটে ‘এক’কে খুঁজে বের করলেন। দুই প্রান্তিক পথের মাঝখানে তৈরি করলেন মধ্যপথ। রচিত হলো ‘সমন্বয়ী ভাববাদ’। নতুন প্রকল্প। গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, বিশেষত বিভক্ত, বিষম ও প্রান্তিক আমাদের জন্যে। ভাবের অভাবে আড়ষ্ট ও অকর্মের গ্লানিতে পিষ্ট আমাদের জন্যে চিন্তার সমন্বয় ও দৃষ্টিভঙ্গির ভারসাম্য দরকার সবার আগে– নইলে বদলে যাবার সকল শ্লোগান নিছক শ্লোগানেই অবসিত হবে। বাংলার প্রতিভাধর দার্শনিক, সিলেটের আলোকিত সন্তান গোবিন্দ দেব তাই প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। নিশ্চয়ই তাঁর চিন্তায় আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে।
মানুষকে তিনি স্থাপন করেছিলেন চিন্তার কেন্দ্রে। তাই তাঁর চিন্তাভাবনাকে বলা হয় মানবতাবাদী দর্শন। সেই দর্শনে, বলা হয়তো বাহুল্য, ঈশ্বর দৃষ্ট, স্বমহিমায়। স্রষ্টার ধ্যানে দীপ্ত ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত তাঁর দর্শন মানবজাতির চিন্তার সঞ্চয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। ভাববাদ ও বস্তুবাদ– দর্শনের এ দুই মূল ধারার ধারাবাহিক বৈরিতা চিরাগত। দু’টোই সত্য, তা নয়– তবে দুয়েই সত্য আছে। যদিও বস্তুবাদ একচোখা, আর ভাববাদ একরোখা। কিন্তু সত্যের প্রকৃতি সতত এক। প্রকৃত সত্য কখনো প্রকৃত সত্যের বিরোধী হতে পারে না। আর হলেও সে বিরোধ প্রকৃত নয়, আপাত। গোবিন্দ দেব এ দুই ধারা অনেক ঘেঁটে ‘এক’কে খুঁজে বের করলেন। দুই প্রান্তিক পথের মাঝখানে তৈরি করলেন মধ্যপথ। রচিত হলো ‘সমন্বয়ী ভাববাদ’। নতুন প্রকল্প। গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, বিশেষত বিভক্ত, বিষম ও প্রান্তিক আমাদের জন্যে। ভাবের অভাবে আড়ষ্ট ও অকর্মের গ্লানিতে পিষ্ট আমাদের জন্যে চিন্তার সমন্বয় ও দৃষ্টিভঙ্গির ভারসাম্য দরকার সবার আগে– নইলে বদলে যাবার সকল শ্লোগান নিছক শ্লোগানেই অবসিত হবে। বাংলার প্রতিভাধর দার্শনিক, সিলেটের আলোকিত সন্তান গোবিন্দ দেব তাই প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। নিশ্চয়ই তাঁর চিন্তায় আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে।
পণ্ডিত
লেখক, আমাদের প্রধানতম আধুনিক কবি, মনীষী ও সাহিত্য সমালোচক সৈয়দ আলী আহসান এক
বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছেন। পথে দার্শনিক গোবিন্দচন্দ্রের সঙ্গে দেখা। কবি কুশল
জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু দার্শনিক নির্লিপ্ত, আত্মমগ্ন, জবাব দিলেন না। মাটির দিকে
তাকিয়ে হাঁটছিলেন, মাথা নিচু করেই চলে গেলেন। এর মানে কি উপেক্ষা? কবি ভাবিত
হলেন, বিস্মিতও। কিছুকাল পরে ফের যেদিন দু’জনের দেখা, দার্শনিক কবির কাছে সলজ্জ
হেসে ক্ষমা চাইলেন। বললেন : ইদানিং, সপ্তাহে একদিন আমি কেবল নিজের সঙ্গে কথা বলি।
ওই দিনটি ছিলো আমার ধ্যান ও নীরবতা দিবস।
গল্পটা পড়েছিলাম অনেক আগে, শৈশবে, সৈয়দ আলী আহসানের ‘যখন সময় এল’ কিংবা ‘জীবনের শিলান্যাস’-এ, ঠিক মনে নেই। তবে মাঝেমধ্যে দিনব্যাপী
কথাবার্তা বন্ধ রাখার বুদ্ধিটা মাথায় ঢুকে গেছে। সেইসঙ্গে গোবিন্দচন্দ্রও
স্মৃতিতে জায়গা করে নিয়েছেন। কারণ নীরবতা পালনের মাধ্যমে
আত্মবিশ্লেষণ ও মনোবৃত্তি উন্নয়নের এ অনুশীলন অদ্ভুত হলেও অভূতপূর্ব নয়। পূর্বকার দৃষ্টান্ত মনে
করবার আগে, প্রসঙ্গত, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি প্রিয়
কবি ও মনীষী সৈয়দ আলী আহসান এবং উদার মানবতাবাদী দার্শনিক গোবিন্দ দেবের উদ্দেশে। আমাদের এ দুই কীর্তিমান
পুরুষ বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ এবং বাংলাভাষা ও বাংলাদেশের গঠন ও ঋদ্ধিতে স্মরণীয়
অবদান
রেখে গিয়েছেন। ঘটনাক্রমে দু’জনই মুদ্রিত হয়ে আছেন
বাংলাদেশের স্মারকে, স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে। একই ২৬শে মার্চ সৈয়দ আলী
আহসানের জন্ম দিবস এবং গোবিন্দচন্দ্র দেবের প্রাণদান দিবস।
পৃথিবীর
পুরাতন বহু ধর্মে মৌনব্রত পালন জরুরি উপাসনা হিসেবে চালু ছিলো। সম্প্রদায়বিশেষে
এখনো আছে। প্রাচীন ভারতবর্ষে খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতকের দিকে বৈদিক সমাজের
বিপুলসংখ্যক মানুষ ধ্যানসাধনায় আত্মিক মুক্তি ও উৎকর্ষের লক্ষ্যে সন্ন্যাসব্রত
গ্রহণ করেছিলেন। তবে ধ্যানচর্চার ইতিহাসের কথা তুললে প্রথমেই বলতে হয় গৌতম
বুদ্ধের কথা। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে উত্তর-পূর্ব ভারতের কপিলাবাস্তুর রাজগৃহে
জন্ম নেয়া এ সিদ্ধার্থ সাধক মানুষের দুঃখ-জরা-ব্যাধি-মৃত্যু দেখে এমনই ব্যাকুল
হয়ে পড়েন যে, মানুষের দুঃখমোচনের উপায় খুঁজতে তিনি রাজভার ছেড়ে বিজন বনে
নিবিড় ধ্যানে ডুবে থাকেন দীর্ঘকাল। সেই ধ্যানের ফলে বুদ্ধ যে বোধি লাভ করেন, তা-ও
ধ্যান। তাঁর প্রতীতী হয়, অনুচিত ও অনিয়ন্ত্রিত বাসনাই সব দুঃখের মূল। প্রবৃত্তিকে
তাই শাসন করতে হবে, মনকে বশে আনতে হবে–সেজন্যে তিনি মানুষকে
লোভ-দ্বেষ-ক্রোধ-ভয়-অহঙ্কার ইত্যাদি অসাধু প্রবণতার বন্ধন থেকে আত্মাকে মুক্ত করে
নির্বাণ লাভের উপদেশ দেন। দুঃখমোচনে তাঁর চারটি উপদেশ ‘চত্বারি আর্য্য সত্যানি’
নামে পরিচিত। এছাড়া বুদ্ধ সম্যক বাক, সম্যক মনন, সম্যক ধ্যান প্রভৃতি অষ্টবিধ
উপায়ে মধ্যপন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দিয়েছেন।
“ওঁ
ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ”। ঋগ্বেদের গায়ত্রীমন্ত্র। রাবীন্দ্রিক
তরজমা : ‘যাঁ হতে বাহিরে ছড়ায়ে পড়িছে পৃথিবী-আকাশ-তারা,
যাঁ হতে আমার অন্তরে আসে বুদ্ধি-চেতনা-ধারা—
তাঁরই পূজনীয় অসীম শক্তি ধ্যান করি আমি লইয়া ভক্তি।’
এভাবে অব্যবস্থ হিন্দুধর্মেও ধ্যানচর্চার ব্যবস্থা সংহত। হিন্দু ইতিহাস জুড়ে আছে
সংসারের বাঁধন ছিঁড়ে নীরব শান্তির খোঁজে অজস্র মানুষের যোগী-সন্ন্যাসী-বৈরাগী
হয়ে নির্জনবাসের ঐতিহ্য। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যুগ যুগ ধরে সহাবস্থানের ফলে
হিন্দু-মুসলিমের আত্মিক সাধনার প্রবণতা ও পদ্ধতিতে পারস্পরিক বিনিময়ও ঘটেছে।
মুসলিম ফকির-বাউলের রচিত গানে যেমন ব্যাপকভাবে হিন্দু ঐতিহ্য ও পৌরাণিক কাহিনী
ব্যবহৃত হয়েছে, তেমনি সত্যপীর-বদরপীর প্রভৃতি মুসলিম সূফী সাধকগণ হিন্দু
জনসাধারণের কাছে শ্রদ্ধার আসন পেয়েছেন। গ্রন্থগত শুদ্ধতাবাদী আপত্তি এ
আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির গৌরবকে কখনোই ম্লান করতে পারে নি। কারণ সব ধর্মের ধ্যানের
লক্ষ্যই আত্মার শান্তি, শব্দগত ও পদ্ধতিগত পার্থক্য এখানে গৌণ। তবে হিন্দু
সন্ন্যাসী ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ধ্যানে অস্বাভাবিক কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন ও সংসার-বৈরাগ্য
আছে, যা সহজাত মানবপ্রকৃতির অনুকূল নয়। রবীন্দ্রনাথ এদেরকে জাগাতে চেয়েছেন তাঁর
গানে—
সন্ন্যাসী,
ধ্যানে নিমগ্ন নগ্ন তোমার
চিত্ত।
বাহিরে যে তব লীন হল সব
বিত্ত।।
রসহীন তরু, নিষ্ঠুর মরু,
বাতাসে বাজিছে রুদ্র ডমরু,
ধরা-ভাণ্ডার রিক্ত।।
জাগো তপস্বী, বাহিরে নয়ন
মেলো হে’।
প্রেরিত পুরুষ যিশু (কুরআনে
ঈসা) সারাজীবন আল্লাহর ধ্যান ও মানুষের জন্যে প্রেমের বাণী প্রচার করেছেন। মানুষকে
উৎসাহ দিয়েছেন দয়ার্দ্র, ক্ষমাশীল, সহিষ্ণু ও আত্মবিশ্বাসী হতে এসব মহৎ গুণাবলি
অর্জনের উপায় হলো নিবিষ্ট ধ্যানে করুণাময় স্রষ্টা ও পালনকর্তাকে হৃদয়ে ধারণ করে
আত্মিক উৎকর্ষ সাধন। একদা এক মুমূর্ষ রোগীকে ঝুলন্ত বিছানায় বয়ে হজরত ঈষার সম্মুখে
এনে রাখা হয়। লোকটির নড়বার শক্তি ছিল না। ঈসা তাকে শক্তি যোগালেন। ক্ষণিকের জন্যে
নিমগ্ন হলেন তিনি, তারপর ওই রুগ্ন ব্যক্তিকে বললেন : প্রভু তোমাকে ক্ষমা করে
দিয়েছেন। অতএব উঠে দাঁড়াও এবং বিছানা গুটিয়ে নিয়ে বাড়ি চলে যাও! সবাইকে অবাক করে
দিয়ে সে তা-ই করলো। মহাপুরুষেরা কেবল আল্লাহতে বিশ্বাস করতেই বলেন না, তাঁরা
বিপ্লব সাধন করেন গোপনে মননে, ব্যক্তিতে নিহিত আত্মশক্তির উদ্বোধন ঘটিয়ে দেন।
নিজেকে না জানলে, নিজের শক্তিতে আস্থা হারালে আল্লাহতে বিশ্বাস ও ভক্তি কিছুই দিতে
পারে না। যিশু তাই টানা দীর্ঘ সময়ব্যাপী উপবাস, নীরবতা পালন ও স্রষ্টার ধ্যান
করতেন এবং অনুসারীদেরকে সেভাবেই স্রষ্টার নৈকট্য লাভের উপদেশ দিতেন।
ইসলামের পূর্ব্বকালীন
সংস্করণগুলিতে উপাসনা হিসাবে নীরবতা পালন বাধ্যতামূলক ছিল। কুরআনে হজরত ঈসার
জন্মকাহিনীতে এর স্পষ্ট উদাহরণ রয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছায় পুণ্যবতী কুমারী নারী মরিয়ম
(বাইবেলে মেরী) গর্ভধারণ করলেন। প্রসবকাল নিকটতর হলে তিনি বিব্রত, বিমূঢ় ও শঙ্কিত
হয়ে মৃত্যু কামনা করতে লাগলেন। তখন আল্লাহর দূত এসে তাঁকে শিখিয়ে দিলেন ‘মানুষের
মধ্যে কাহাকেও যদি তুমি দেখ তখন (ইঙ্গিতে) বলিও : আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতা
অবলম্বনের মানত করিয়াছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করিব’।
(কুরআন; ১৯:২৬)
উদ্ধৃত অনুবাদে ‘সাওম’ বা
রোযার অর্থ করা হয়েছে ‘মৌনতা অবলম্বন’। কারণ বাক্যভঙ্গি থেকে মনে হয় সেকালের রোযায়
মূল কর্তব্যই ছিলো নীরবতা পালন। ইসলামের শেষ সংস্করণ মুহাম্মাদী শরীয়ার রোযায় এ
কঠিন শর্ত শিথিল, বরং বলা যায় রহিত করা হয়েছে। সব ধরণের কথাবার্তার স্থলে শুধু
খারাপ কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে, এমনকী এ নিষেধাজ্ঞাও তেমন মৌলিক রাখা হয় নি যা
লঙ্ঘন করলে বিধিগতভাবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। অন্যায় কাজ ও খারাপ কথার ফলে রোযার মূল
আধ্যাত্মিক লক্ষ্য যে ব্যর্থ হয়, সে অবশ্য সহজবোধ্য ও সর্বস্বীকৃত।
ড. গোবিন্দ দেবের নীরব
ধ্যানসাধনার গল্পটি, পড়ার পর থেকেই, দীর্ঘকাল আমাকে আচ্ছন্ন করে আছে। তাঁর
বিরাট ব্যক্তিত্বের প্রতি দুর্বলতা এর কারণ অবশ্যই নয়। কেননা ওই গল্পের আগে আমি
তাঁর সম্পর্কে কিছুই জানতাম না, সাহিত্যের বাইরে খুব একটা আগ্রহ ছিলো না বলে। তবে
যেখানে সাহিত্য-ইতিহাস-দর্শন-গল্প-আইন-উপদেশ সমস্তকিছু আশ্চর্য বুননে গ্রন্থিত,
সেই কুরআনের প্রতি সূক্ষ্ম ও অনুপেক্ষ্য একটা টান বরাবরই বোধ করে এসেছি। ড. দেবের
মৌনব্রত আমাকে তাই টেনে নেয় অনেক গভীরে, ঐতিহ্যের শেকড়ে—যেখান
থেকে নিত্যদিন সত্যরস চিত্তে চিত্তে সিঞ্চিত হতে থাকে। সহসাই উপলব্ধ হয়, আত্মার
ভেতর নির্মাণ করে আত্মস্থ হয়ে ওঠার এই যে শিল্প, এ তো নতুন নয়। দূরেরও নয়—এ চিরকালের মানুষের,
এবং বিশেষ করে আমাদের নিজের জিনিস। ধ্যান প্রাচ্যের ধন : হেরা পাহাড়ের গুহায়,
হিমালয়ের ছায়ায়, সিন্ধুর তীরে, জাযিরার তাঁবুতে তাঁবুতে, তিব্বতের অরণ্যে,
বঙ্গোপসাগরের উপকূলে হাজার বছর ধরে চর্চিত ঐতিহ্য। মনে পড়ে যায় কুরআনের গল্প,
অলৌকিক জননী মরিয়মের গাঁথা সাক্ষী হয়ে আসে নীরবতায় নিহিত তাৎপর্যের। দৃশ্যের পর
দৃশ্য। মূসা নিমগ্ন হয়ে আছেন তূর পর্বতের নির্জন উপত্যকায়। ইবরাহীমের চোখে ঘুম
নেই—রাত্রির অন্ধকারে
স্তব্ধ মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন অপলক, লক্ষ লক্ষ
নক্ষত্রের ভিড়ের ভেতর ব্যাকুল হয়ে খুঁজে ফিরছেন অনন্তকে, তাঁর পালনকর্তাকে।
দেখতে দেখতে রাত ফুরিয়ে যায়, তারারা হারিয়ে যায়—কিন্তু
ইবরাহীমের ধ্যান ভাঙে না, তিনি কূল খুঁজে পান না, কেবলই ভাবনার তলে তলিয়ে যেতে
থাকেন। তাঁর বোধ হয়, না, তারারা নয়, যারা অন্ধকারে আসর বসায় আর ভোরের আলো
ফুটতেই আলোর আড়ালে গা ঢাকা দেয়, তারা মহাশক্তিমান ঈশ্বর হতে পারে না। ইবরাহীম
বিরক্ত হয়ে বলেন : ‘আমি অস্তগামীদের পছন্দ করি না।’ তারপর যখন রাতের পৃথিবী
দুধশাদা জোছনায় ভাসিয়ে দিয়ে চাঁদ ওঠে আকাশে, ইবরাহীম সচকিত হয়ে ওঠেন। দশদিক
আলো করে সোনার থালার মতো জেগে ওঠা সূর্য তাঁকে মোহিত করে। অবশেষে নিরন্তর অনুধ্যান
তাঁকে উদ্ধার করে পৌঁছে দেয় সিদ্ধান্তের সৈকতে এবং তিনি মুখ ফেরান, নিবিষ্ট হন,
আকাশ ও পৃথিবীর মহীয়ান স্রষ্টার প্রতি।
‘ধ্যান’
এর শাব্দিক মানে গভীর চিন্তা। তবে ‘গভীর চিন্তা’য় যা নেই, ধ্যানে সেই স্তব্ধতা
আছে, কী রকম যেন পাহাড়ি একটা আবহ। চিন্তার বিশেষ এ চারিত্র প্রায়শই গেরুয়া বসন
পরা, কারো কারো কল্পনায় ঢিলে আলখাল্লা জড়ানো। দীর্ঘ ধর্মলগ্নতার ছাপ। গভীর
চিন্তার জন্যে গম্ভীর পরিবেশ দরকার, সূফী-তাপসেরা তাই নির্জনবাস পছন্দ করতেন—এভাবেই কালক্রমে
ধ্যানের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বৈরাগ্যও। সংসারবিরাগ ও সন্ন্যাসবাদ তার স্থায়ী
ধারককে অলৌকিক কোনো শান্তি দিতে পারে কি না তাতে নিশ্চিত হওয়া যায় না, তবে তাঁরা
যে আত্মবঞ্চিত হন জীবনের বিপুল আনন্দ-বেদনার বৈভব থেকে, সেটি নিশ্চিত তো বটেই, বরং
তাঁরা কৃতঘ্নের মতো বঞ্চিত করেন সেই সমাজকেও, যার লক্ষ বছরের সঞ্চয় থেকে দান
গ্রহণ করে করে তাঁদের দেহ-মন-ভাব-ভাষা বিকশিত হয়েছিলো। এইখানে এসে আমরা খুঁজে পাই
একটি স্পষ্ট পার্থক্যরেখা, যেটি ধ্যানাসক্ত যোগী থেকে সত্যাসক্ত ধ্যানীকে আলাদা
করে দেয় এবং আমরা বিলক্ষণ ঠাহর করে উঠতে পারি যে, গুহামানব ও মহামানবের ধ্যানে
দৃশ্যগত সাদৃশ্য থাকলেও লক্ষ্যগতভাবে এ দুই ব্রতীর অধিবাস দুই মেরুতে। এ কারণেই
আবহমান কল্যাণকামী মানববুদ্ধির কাছে জীবনবাদী ধ্যান সর্বত্র স্বীকৃত কিন্তু
জীবনবিমুখ বৈরাগ্য সর্বৈব ধিকৃত।
গৌতম
বুদ্ধকে নিয়ে এশিয়া গর্ব করতে পারে, কারণ ইউরোপের জ্ঞানগুরু প্লেটো-অ্যারিস্টটল
যখন নিপীড়িত দাসসমাজকে নিম্নস্থ সেবকশ্রেণী ধরে নিয়ে বিষম সমাজব্যবস্থার
পরিকল্পনা রচনা করেন, তার বহু আগেই বুদ্ধ বলেছিলেন : জন্ম-বংশগতভাবে কেউ অচ্ছুৎ
হয় না, মানবসমাজে উঁচুনিচু সকল শ্রেণীভেদ অন্যায়, মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে
তার কর্মের ওপর। গাঢ় মমতায় ভরা একটা প্রাণ নিয়ে জন্মেছিলেন বুদ্ধ। কারো কষ্টই
তিনি সইতে পারতেন না। তাই তাঁর ধ্যানের লক্ষ্য ছিলো দুঃখমোচন। তবে ধ্যান করে তিনি
যে তত্ত্ব উদ্ভাবন করলেন, তা মানবসমাজকে সুখী করবার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে কি না, সেই
প্রশ্নের অবকাশ আছে। এই জায়গায় এসে নবী-রাসূলদের ধ্যানের প্রকৃতি ও গৌতমবুদ্ধের
ধ্যানের ধরন আলাদা হয়ে পড়ে। অলৌকিক প্রেরণার কথা বাদ দিলেও পার্থক্যটা মৌলিক।
নবী-রাসূলগণ মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশের প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টায়
তাঁদের চিন্তা ও শক্তি উৎসর্গ করেছেন, অন্যদিকে বুদ্ধ দুঃখের বাস্তব কারণ উপেক্ষা
করে স্বাভাবিক ও সহজাত মানবপ্রবৃত্তির বিভিন্ন প্রবণতাকে দমন করে দুঃখবোধের
ক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলতে চেয়েছেন। একদিকে বিকাশ, অন্যদিকে দমন। পায়ে ব্যথার
রোগীকে চিকিৎসকের একপক্ষ বলেছেন ‘ব্যথানাশক অষুধ সেবন করো’, অন্যপক্ষ বলেছেন ‘পা
কেটে ফেলো।’
হেরা
পাহাড়ের গুহায় বসে দিনের পর দিন যিনি নীরব-নিভৃত ধ্যানে নিমগ্ন ছিলেন,
পরবর্তীকালে তিনিই তাঁর অনুসারীদেরকে বললেন : ‘লা সিমাতা ইয়াওমিন ইলা আল-লাইল’,
সকাল-সন্ধ্যে নীরবতা পালন ইবাদত নয়। এ বাক্যটি পূর্বতন শরীয়ার আনুষ্ঠানিক নীরবতা
পালনের বাধ্যতার রহিতকরণ বোঝায়; এর মানে এই নয় যে, যে- উদ্দেশ্যে পূর্বকালে
নীরবতা পালনের বিধান চালু হয়েছিলো সেই উদ্দেশ্য এখন আর প্রয়োজনীয় বা কার্যকর
নয়। অর্থাৎ মুহাম্মাদী শরীয়ায় নীরবতা পালনের
পূর্বানুরূপ ইবাদত পরিবর্তিত হয়েছে, নীরবতায় নিহিত
তাৎপর্য রহিত হয় নি। তাই মহানবী বলেছেন ‘মান সাকাতা নাজা’, যে চুপ থাকলো সে
মুক্তি পেলো। বস্তুত মানুষের জন্যে উচ্চতর প্রজ্ঞা অর্জনের ক্ষেত্রে নীরবতার যে
গভীর ভূমিকা রয়েছে, যুগপৎ আল্লাহর বিধান ও মনীষীদের জীবনে তার সাক্ষ্য রয়েছে।
তাছাড়া যুগভেদে সত্যের রূপ বদলাতে পারে, কিন্তু তার স্বরূপ অপরিবর্তনীয়। “তুমি
কখনও আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাইবে না”—এই
বাক্যটি কুরআনের ৩৩:৬৩, ৩৬:৪৩, ৪৮:২৩ এবং আরো বহু আয়াতে পুনরাবৃত্ত হয়েছে। ফলে
আমরা দেখি যে, ইসলামের বর্তমান শরীয়ায় নীরবতা পালন ও ধ্যানমগ্ন হয়ে স্রষ্টার
সান্নিধ্য লাভের ব্যবস্থা আগের সমস্ত প্রথার চে’ সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও কার্যকর
হয়েছে। কুরআন মানুষকে পরমসত্তার উপলব্ধি অনুক্ষণ হৃদয়ে জাগ্রত রাখতে উৎসাহ
দিয়েছে। বলা হয়েছে : ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন—তিনি
তোমাদের সঙ্গে আছেন’; (৫৭:৪)। আল্লাহর
দূত জিবরীল এসে রাসূল মুহাম্মদ সা.-কে ইহসান শিক্ষা দিয়েছেন। বলেছেন : তুমি
এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো, যদি তা না পারো তবে মনে
করো যে তিনি তো তোমাকে নিশ্চয়ই দেখছেন। ধ্যানকে ‘দেখা’ শব্দ ব্যবহার করে এর আগে
আর কখনোই এতো প্রত্যক্ষ ও জীবন্ত করে তোলা হয় নি। অধিকন্তু ইসলাম নিভৃত ইবাদত
সালাতের মাধ্যমে দূরবর্তী ও আয়াসসাধ্য ধ্যানসাধনাকে সর্বজনীন ও নিকটতর করে এনেছে।
রাসূলের সহচরগণ সালাতে এমনই নিবিষ্ট থাকতেন যে, বাইরের পৃথিবীর কোলাহল তাঁদেরকে
স্পর্শ করতে পারতো না। ইবাদতের বাইরেও, মুসলিম ইতিহাসের সকল মনীষী স্বভাবতই ছিলেন
ভাবুক ও নির্জনতাপ্রিয়। তাঁরা জানতেন, নির্জনতার কাছে যা পাওয়া যায়, জনতা তা
দিতে পারে না।
কুরআন-সুন্নাহর
এ ইহসানের ধারণাকেই সূফীরা বলেন ‘মুরাকাবা’। মুরাকাবা
মানে পর্যবেক্ষণ, তত্ত্বাবধান। মুরাকাবা আত্মনিরীক্ষণের প্রক্রিয়া। নীরবতা ছাড়া
মুরাকাবা হয় না এবং মুরাকাবা ছাড়া ধর্মের মর্মে পৌঁছা সম্ভব নয়। যোগীদের ধ্যান
ও সূফীদের মুরাকাবায় ধর্মীয় সিদ্ধি মুখ্য হলেও এর মাধ্যমে তাঁরা মানসিক প্রশস্তি
ও আত্মিক প্রশান্তি অর্জন করেন, প্রবৃত্তির সংশোধন ও চরিত্রের উন্নয়ন সাধন করে
বহু ক্ষুদ্রতা অতিক্রম করে তাঁরা সৃষ্টি ও মনুষ্যত্বের অনেক উঁচুতে উন্নীত হন।
মানুষ হিসেবে ওপরে ওঠা সকল ধর্মের সব মানুষের জন্যেই প্রয়োজন, এবং এই আরোহনের
সিঁড়ি হিসেবে নীরবতা পালন ও ধ্যান ধারণও সবার জন্যেই দরকার। অতীতের বিপরীতে, আজকে
আমরা বাস করছি অনেক উন্নত ও অতি জটিল এক পৃথিবীতে। জীবন এখানে কেবলই গড়িয়ে
যাচ্ছে, ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং জড়িয়ে যাচ্ছে বিচিত্র মুখরতা, ব্যস্ততা ও জটিলতায়।
অঢেল অর্থ আয় করছি, অর্থ দিয়ে আনন্দ কিনছি—কিন্তু
এ-ই কি সব? না, মানুষের জীবন এতো ক্ষুদ্র নয়, মানুষ পৃথিবীতে জন্মেছে এক
মহাজাগতিক আত্মা ধারণ করে, সেই আত্মা অর্থের চেয়ে অর্থময় ও পার্থিব আনন্দের
চেয়ে উর্ধতর নন্দনে আশ্রয় চায়। অধ্যাপক ইমাম গাযালীর কাছে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয়
বিদ্বানের মর্যাদার চেয়ে যে- শান্তি প্রধান হয়ে উঠেছিলো, বাদশাহ ইবরাহীম আদহামের
চোখে বাদশাহির চেয়েও যে- সম্মান লোভনীয় মনে হয়েছিলো, সকল মানুষের আত্মা
জন্মগতভাবেই সেই শান্তি ও সম্মানের প্রার্থী। সেজন্যে দরকার সাধনা। দরকার একটু
নিভৃতি, কিঞ্চিৎ নৈঃশব্দ, কিছুটা নীরবতা, কয়েক মুহূর্ত ডুবে থাকা নিজের ভেতরে,
প্রতিদিন।
পশ্চিম
এখন ধ্যান নিয়ে গবেষণায় নেমেছে। ধ্যানী ও সন্ন্যাসীদের মস্তিষ্ক যন্ত্রে
নিরীক্ষণ করে অসাধারণ স্নায়বিক স্থিরতা ও ক্ষমতা দেখে বিজ্ঞানীরা অবাক হচ্ছেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে আবির্ভূত হয়েছেন জনৈক ‘মহাজাতক’, যিনি মুরাকাবাকে মেডিটেশন
বানিয়ে আলখাল্লার বদলে তার গায়ে চড়িয়েছেন স্যুট-টাই, দেশজুড়ে শাখা খুলে মস্ত
ব্যাবসা ফেঁদে বসেছেন। এই ধূর্ত ব্যক্তি ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা আধুনিক-শিক্ষিত
তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করতে তাঁদের ধ্যানশিক্ষার স্তরগুলোকে চমকপ্রদ শব্দ ও
পরিভাষায় নামকরণ করে প্রচার করছেন, যেমন ‘কোয়ান্টাম মেথড’। এতে
তাঁরা স্বকথিত আত্মার শান্তির সাধনা শেখান, অথচ কোয়ান্টাম তত্ত্ব উচ্চতর
পদার্থবিজ্ঞানের বিষয় এবং পদার্থবিজ্ঞানে ‘আত্মা’ বা ‘মন’ বলে কিছুই নেই। কাজেই
কোয়ান্টাম মেথড যে একটি উপাদেয় কৌতুক, তাতে আর সন্দেহ থাকে না। দেশকর্তারা এ
প্রতারকচক্রকে দেশছাড়া করতে ইতস্তত করছেন কেন, সে এক রহস্যময় প্রশ্ন।
ইন্দোনেশিয়ার
বালি দ্বীপের অধিবাসীরা তাদের নববর্ষের প্রথম দিন উদযাপন করেন জাতীয় নীরবতা দিবস
হিসেবে, ওইদিন ভোর ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা কিছু খান না এবং কোনো কথা
বলেন না, কেবল ভাবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সমাজেরও কিছু চিন্তাশীল মানুষ সময়ে
সময়ে মৌনব্রত পালন করেন, এ লেখাটা লিখতে লিখতে যেমন জানলাম কীর্তিমান
চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্তের কথা। আসলে
নীরবতা পালন করতে হয় না, কথাবার্তা পালন না করাই নীরবতা। নিজেকে জানতে নীরবতা
মানতে হয়, তেমনি ‘রব’কে পেতেও হতে হয় নীরব। কেননা পরমসত্তাকে শুধু উপলব্ধিতেই
ধারণ করা যায় এবং সেই উপলব্ধি একাগ্র হয় নীরবতায়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘মানসী’র
‘ধ্যান’ কবিতায় ঈশ্বরকে বরণ করেন বিজনে এবং তাঁরই কাছে নিজের জীবন-মরণ নিবেদন
করেন :
“নিত্য তোমায় চিত্ত
ভরিয়া
স্মরণ করি,
বিশ্ববিহীন বিজনে
বসিয়া
বরণ করি,
তুমি আছ মোর জীবন-মরণ
হরণ করি।”
সেই
কবে পড়েছিলাম, ‘পাহাড় বলে তাহার সমান, হই যেন ভাই মৌন মহান’, কিন্তু আমি তা হতে
পারি নি; তারপর ক্রিয়ারহিত জেনে কুরআনের নীরবতার গল্পেও তখন এষণা বোধ করি নি,
কিন্তু কিছুদিন ধরে বকবকযন্ত্র মোবাইল ফোন বন্ধ রাখবার অভ্যেস করতে করতে সহসা মনে
পড়ে গেলো অনেক কাল আগে পড়া গোবিন্দ দেবের নীরবতা দিবস পালনের কথা এবং আমি পেছন
ফিরে তাকালাম। দেখলাম, ঘরের চারদিকে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য, মুহুর্মুহু গুলির
শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে কালরাত্রির অন্ধকার, চিৎকার উঠছে লাশ পড়ছে রক্ত বইছে,
তারই মধ্যে একজন নির্লিপ্ত গোবিন্দ দেব তাঁর মেয়ে রোকেয়াকে বলছেন : ‘মা, একটু চা
করো তো। ততোক্ষণে আমি ভগবানের একটু নাম করে নিই’—এই
বলে তিনি নিজের ঘরে ঢুকলেন এবং মগ্ন হলেন তাঁর পরম সৃষ্টিকর্তার ধ্যানে, শেষবারের
মতো। গোবিন্দ দেবের ৯টি বই ও ৫৪টি প্রবন্ধ থেকে আমরা তাঁর চিন্তাভাবনার অনেকখানিই
জানতে পারবো—কিন্তু অকস্মাৎ বীভৎস
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর প্রভুকে কী বলেছিলেন, তা আর কখনোই জানতে পারবো
না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন